শেষ আশ্রয়টুকু ডুবে গেছে বন্যার জলে,
চাল-চুলো হারিয়ে সব, পুড়ছে দুঃখের অনলে।
ক্ষুধার্ত মানুষগুলো সব, কাটায় নির্ঘুম রাত,
ধরণীর মাঝে নেমে এলো যেন অভিসম্পাত!
পোষা প্রাণিগুলো খাবারের কষ্টে কাঁদে নীরবে,
খড় বিছালির অভাবে খাবার কোথায় পাবে?
মাচানের উপরে পাশাপাশি মানুষের সাথে,
ক্ষুধার্ত পেটে চুপচাপ থাকে দিনে ও রাতে!
সাজানো বাগ-বাগিচা, কৃষকের ফসলী জমি
ডুবেছে সব, অবশিষ্ট নেই বাসযোগ্য ভূমি।
চোখের সামনে প্রমত্ত নদীর করাল গ্রাসে,
পৈত্রিক ভিটেমাটি বিলীন এক নিমেষে!
গগনবিধারী আহাজারিতে কম্পিত হয় হৃদয়,
প্রকৃতির নিষ্ঠুর খেয়ালে অসহায় তাকিয়ে রয়।
নিচে থৈথৈ জল, উপরে বৃষ্টির ধারা,
বানভাসি অপেক্ষায় থাকে, কখন আসবে খরা।
কোথাও নেই একটু উষ্ম পরশের দেখা,
সিক্ত বসনে রোগবালাই নিত্য কপালে লেখা।
শিশু সন্তান নিয়ে কাটে না মায়ের ভয়,
জলে পড়ে যদি অতলে হারিয়ে যায়।
দুগ্ধপোষ্য শিশুর কান্না থামেনি কিছুতে,
সিক্ত আঁচলে খোঁজে শুকনো পরশ পেতে!
মাচানের উপর অচল দেহে অশীতিপর বৃদ্ধ,
নীরবে শুয়ে আছে, মুখের ভাষা অবরুদ্ধ।
পেটে পড়েনি দানাপানি, কাঁপছে শরীর জ্বরে,
জানা নেই তার, কবে খেয়েছে পেট পুরে।
এদিকে আকাশে দেখা গেছে ঈদের চাঁদ,
অবুঝ শিশুর বায়না শুনে বাড়ে আর্তনাদ!
দূর্যোগের মাঝে ঈদ, দিতে পারবে কি কুরবানী?
বানভাসি মানুষগুলোর খুশি, কেড়েছে বন্যার পানি।
করোনাকালে থমকে গেছে জীবনের গতি,
‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়েছে বন্যার দুর্গতি।
দূর্ভোগ হয়তো কদিন পরেই যাবে চলে,
বানভাসি মানুষগুলো কষ্টের দিনও যাবে ভুলে।
থেকে যাবে শুধু সময়ের দুঃসহ স্মৃতিগুলো,
শতাব্দী পরেও প্রজন্ম জানবে দুর্ভোগের কথাগুলো।
করোনাকালে এসেছিলো ঈদ, একেবারে সঙ্গোপনে,
অবর্ণনীয় কষ্টে থাকা বানভাসি মানুষের জীবনে।