ক্ষুদ্র এ জীবন থেকে সবটুকু যেমন যায় না নেয়া,
তেমনি চাইলেও সবকিছু রাখা যায় না ধরে।
একটা সময় অনেক কিছুই ছেড়ে দিতে হয়,
সময়ের সাথে হালকা হয়ে যায় কঠিন বাহুবন্ধন!
ঘর ভর্তি সাজানো দামী সব আসবাবপত্র,
আর এত দিনের পরিচিত মানুষগুলো
আস্তে আস্তে হয়ে যায় বেশি অপরিচিত।
ডাক্তার বলে-আরো কিছুদিন বাঁচতে হলে,
নরম তুলতুলে ফোমের বিছানাটা ছেড়ে
থাকতে হবে সমতল তক্তার বিছানায়।
ক্রমাগত বাড়তে থাকে চশমার পাওয়ার,
তবুও প্রিয় পত্রিকাগুলো পড়তে কষ্ট হয়।
ব্যক্তিগত লাইব্রেরির তালা খুলেনি অনেকদিন,
পড়তে ইচ্ছে হয় না প্রিয় কবিতার বই।
নিত্যসঙ্গী গতরের ব্যথায় আড়ষ্ট জীবন,
হাড়গুলো খুবই ভঙ্গুর পাটখড়ির মতো।
খাবারের চেয়ে এখন ওষুধের সংখ্যা বেশি,
ঘুনপোকা গোপনে খেয়েছে দেহঘরের সবগুলো খুঁটি!
ছোট একটা ঝড় আসলেই ঘরশুদ্ধ উপড়ে যাবে,
নিভে যাবে হাতে রাখা মোমের বাতি!
ফাগুনের হাওয়ায় ঝরে পড়ে শুকনো পাতা,
চৈত্রের খরতাপে ফাটা জমিনের মতো কপালে পড়ে ভাঁজ!
দুর্দান্ত ছুটে চলা অশ্বারোহী তীরন্দাজ এখন,
জানালার পাশে শুয়ে আকাশ পানে চেয়ে কাটায় অলস সময়।
জীবনের জলসাঘরে এখন আর বাজে না নূপুরের ঝংকার,
হাতের ইশারায় ছুটে আসে না পাইক পেয়াদা যত।
পৃথিবীর রূপ, রস আগের মতো লাগে না ভালো,
অতীতের স্মৃতিগুলো রোমন্থনে হতে হয় কেবলই মোহাবিষ্ট।
পুরোনো দেয়াল ঘড়িটা চলে আগের মতো,
শুধু চলতে চায় না সাধের দেহঘড়িটা!
ফেলে আসা জীবনের সুখ-দুঃখ ভুলে গিয়ে,
মাটিকেই ডাকে এখন জড়াতে অসীম মমতায়!
চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবে বড় গরমিল,
অপূর্ণ থেকে গেল প্রাপ্তির পেয়ালা।
বিস্ময় ভরা জগত সংসার শুধুই মায়ার বন্ধন,
সময় সংগোপনে তার সবকিছু করেছে লুণ্ঠন।