বাংলা কবিতার ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। এটি বিভিন্ন সময়কালে বিভিন্ন রূপে বিকাশ লাভ করেছে। নিম্নে বাংলা কবিতার ইতিহাসের প্রধান ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:
প্রাচীন যুগ (৮ম - ১২শ শতাব্দী)
বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কবিতা ছিল চর্যাপদ, যা ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। এগুলো বৌদ্ধ সহজিয়া ধারার সাধকদের দ্বারা রচিত কবিতা, যেখানে তত্ত্ব ও দর্শনের সাথে মিলিয়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছোঁয়া পাওয়া যায়। ভাষাটি অনেকটা অপ্রচলিত এবং তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সংযুক্ত।
মধ্যযুগ (১৩শ - ১৮শ শতাব্দী)
এই সময়ে বাংলা কবিতা রামায়ণ, মহাভারত, এবং পুরাণের অনুবাদ ও অনুপ্রেরণায় রচিত হতে শুরু করে। বৈষ্ণব পদাবলী এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলন ও রাধাকৃষ্ণের প্রেম নিয়ে অসংখ্য কাব্য রচিত হয়। বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস এর প্রধান কবি।
আধুনিক যুগ (১৮শ - ১৯শ শতাব্দী)
ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা হয়, যখন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ও হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো চিন্তাবিদরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই সময়ে বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্যের ধারা প্রবর্তন করেন। তাঁর লেখা "মেঘনাদ বধ কাব্য" বাংলা সাহিত্যে ইউরোপীয় ধাঁচের মহাকাব্যের প্রথম উদাহরণ।
রবীন্দ্র যুগ (১৯শ শতাব্দীর শেষাংশ - ২০শ শতাব্দী)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা কবিতার জগতে এক বিপ্লবের সূচনা করেন। তাঁর কবিতা মানবতাবাদ, প্রকৃতি, প্রেম, এবং আধ্যাত্মিকতার গভীরতায় ভরপুর। রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতীকী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক যুগ (২০শ শতাব্দী - বর্তমান)
এই যুগে বাংলা কবিতায় নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় একটি নতুন পথ দেখান, যেখানে প্রকৃতি ও জীবন দর্শনের গভীরতা থাকে। পরবর্তীতে শামসুর রাহমান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এবং আল মাহমুদ প্রমুখ কবিরা তাদের কবিতায় ব্যক্তি স্বাধীনতা, সমাজের অসঙ্গতি, ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছেন।
বাংলা কবিতা তার ইতিহাসে নানারকম পরিবর্তন, আন্দোলন, ও সামাজিক ভাবনার বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত একটি সমৃদ্ধ ধারায় এগিয়ে এসেছে।