আমার বুকের ভিতর বহমান একটি দীর্ঘতম তন্বী নদী,
স্কন্ধে স্থানু বিরাট কঠিন পাহাড়, আমার মাথার
ওপর বিশাল আকাশ; ওল্কারা করে ছুটাছুটি সবেগে,
আমায় পায়ের তলায় উৎতপ্ত মৃত্তিকা ; পাদুকা বিহীন
চরণ রাখতেই পড়ে যাবে ফোসকা কোনো সন্দেহ নেই।
আমি এক চির-দুঃখী কবি
দুঃখকে করেছি বরণ জন্মলগ্ন থেকে
এই ধূসর নিঃষ্ঠুর পৃথিবীতে এসেছি আমি নীশিথের
এক অন্ধকারে ; এখানে ছিলাম আমি, আছি যুগ-যুগান্তর।
আছি এক সমুদ্র বিরহ-বুকে প্রায় পাঁচটি বৎসর
তবুও যেন ব্যথারা বেড়েই চলেছে ক্রমশঃ।
এখানে দুঃখ কিংবা দুঃখীদের কোনো মূল্য নেই,
তারা যেন অবহেলে সরণীর 'পর পড়ে থাকা শুকনো পাতা
পথচারীদের ইচ্ছায় বা অসতর্ক চরণ-তলে পিষ্ট হচ্ছে ক্রমাগত
আমিও ঠিক তেমনই এক দুঃখী শুষ্ক পল্লব।
আমি বিংশ শতাব্দীতে আধুনিক সভ্যতায় এসেও
পুরনো সেই মান্ধাতার আমলের প্রহর গুনছি
এখন আর চোখে পড়েনা তেমন ইনসান, ছদ্মবেশী
মনুষ্য সংখ্যাধিক ; এখন আর সে যুগের মত ইনসাফ নেই
ইহা যেন কর্পূরের মত উড়ে গেছে নভোনীলে।
হতাশা ভীষণ হতাশা ; দুঃখ প্রবল দুঃখ
বুকের ভিতর, চোখের ভিতর।
আমি প্রাথমিক জীবনে পিতার চোখের বালি
দ্রোপদী আমি ; আমি প্রথম যৌবনে হারানো রতন
কর্ণ-মাতা কুন্তি।
আমার বুকের ভিতর চাপা কষ্ট, বাবলা কাঁটা যেমন
বিঁধে চামড়ার ভিতর তারো অধিক।
এখানে প্রেম নেই, প্রকৃত প্রেমিকও নেই ; ছদ্মবেশী প্রেমিক-
প্রেমিকার দাপটে জবুথবু প্রকৃত প্রেম ও প্রেমিক৷
হারানো উটের মালিকের মতন আমিও ভীষণা ব্যাকুল ব্যতিব্যস্ত
হারানো হংসীশাবকের মাতা হংসীর করুণ হৃদয় আমি।
আমাকে দুঃখরা ছায়ার মতন রেখেছে ঘিরে
যুগের পর যুগ ; দিনে দিনে আরো গভীরতর....
আমার দুচোখে মেঘের বসবাস ; বৃষ্টি হয়ে ঝরে
রাতের শ্রাবণে। পুরুষ কাঁদেনা দিবসে, সম্মুখে,
নিভৃতে যখন আসে আষাঢ়, শাওন তখন তারা
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে করে ক্রন্দন গভীর রজনী।