আমি      কত নিশি কত নিরিবিলি কত
                  আর কাঁদিব রে?  
আমি      কত নিরবে কত শারদে কত
                  আঁখিজল ঝরাব রে?    
কত       যে শারদ রাত নিদ নাহি আঁখিপাত
                    নির্ঘুম কাটে রে!  
কত       যে বসন্ত কেটে গেছে বিরহানন্দ ব্যথা
                    পুনঃ জাগে রে।
কত       যে স্বপন আশার তপন ডুবে গেছে নীলে
                     অকালসন্ধ্যা,
কাননে     কুসুম দোলে না মৃদুল বাতাসে , ফুটে না
                      রজনীগন্ধা।
রাখাল     বাজায় না মধুর বাঁশি তরু ছায়াতলে
                      প্রিয় প্রভাতে,
শীতের     মৌসুমে পানকৌড়ির মেলে নাহি দেখা  
                      হিম শোভাতে।
ফাগুন     এসেছে তবু বসন্ত ছোঁয়া নাহি লাগে
                       তনু-বপুতে
নূপুরের    ধ্বনি আর পশে না'ক' কর্ণেতে মম
                       প্রাত-শুরুতে
বাতায়ন    খুলে আঁখি মোর পায় নাহি আর হেরিতে  
                       সবুজ মাঠ,
কালের     বিবর্তনে উধাও গ্রামান্তর বিংশ শতাব্দীতে
                     পুরাতন পথ-ঘাট।
শ্রাবণ      গগনে বরিষণ শেষে আঁকে না রে আর  
                       বাঁকা রঙধনু,  
বাদলার   শেষে জুঁই  কুঞ্জে মেলে নাহি দরশন
                     তব ভেজা তনু।
কত      যে শারদ-পূঁজো আসে আর যায় তার নিজ
                       রীতি-নিয়মে,
গাঢ়      নীলবাসে তনুটি ঢাকিয়া তরুণী আলোক
                       হাতে মন্দিরে
দরশন    নাহি পাই দেবালয়ে  ওই নৈবেদ্য  হাতে
                      দিতে অর্ঘ,
ত্রস্ত       ব্যাকুল চরণ ওই দেব মন্দিরে বুঝি  
                      খুঁজো স্বর্গ।
বৈশাখী   মেলায় মৃদুসজ্জায় লোকেদের ভীড়ে
                      একটি সে মুখ,
আর     পাইনা দেখা চলি একা একা তাই মেলার মাঠে
                      লয়ে ভাঙা-বুক।
জৈষ্ঠ্যের  ঝড়ে খুব মনে পড়ে আম্রকাননে সেই
                       দিনগুলি,
ঝটিকার  শেষে মধু হাসি হেসে এলে আমবাগে
                      কুড়াতে ভুলি।
আষাঢ়   মাসেতে ঘন বাদলায় গোধূলি লগন
                      চমকে অশনি,
গরজে    ওঠেরে থেকে থেকে মেঘগুলি কে যেন ওই
                       ডাকে অমনি ।
বৃষ্টির     শেষে একগাল হেসে এলে চঞ্চলা
                      সেহেলির সনে,
দখিনা    হিমেল বায় তব নীল উর্ণী উড়িত
                      শ্রাবণ গগনে।
শ্রাবণ     দিনে ওই  পথ-মাঝে তব পথ-রেখা আঁকি
                      বড় আকুলি,
তোমারে  এমন ঘন বরষায় কবো হৃদয়ের
                     কথা মনখুলি।  
ভাদ্র       আশ্বিন শরৎ বিকেল মনে পড়ে মোর
                      নদীর ধারে,
সাদ       কাশফুলে  পরশ বুলাতে আঁখিতে রে মোর
                    ভাসে বারেবারে।
অঘ্রাণ    মাসে ওই ধান্য ক্ষেতে পড়েনা তো লোচনে তোমায়
                      চপলা রমণী,
নদীতে    যে আর হেরিনা গো সাঁঝে সাদা পাল তোলা
                      ছোট সে তরণী।
পউষের   প্রাতে শিশিরের ঘাসে বুঝি আর পড়ে
                        না তব চরণ,
আমি     আজো ভোরে বিভো দরবারে তুলি মোর হাত  
                         গভীর মগন।
দাও     গো  ফিরায়ে সেই সুখ দিনগুলি হে জগন্নাথ
                         উদাস কবিরে,
ফাল্গুনে  আজো স্নিগ্ধ বিকেল চোখের ওই মাঝে
                        ভাসে ওই ছবিরে।      
চৈত্র      দুপুরে ভরা রোদ্দুরে ঘর্মসিক্ত  তব কপোল
                         আর নাহি হেরি,
বসন্ত    বেলা হেথায় একেলা বেঁচে আছি তবু
                       তব স্মৃতি ঘেরি।