বড় পাগল ছেলে দিপু,বছর দশেক বয়েস,
চা এর দোকানে কাজ করতে করতে
আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখত সে।
বাবাকে সে কখন দেখেনই,
মা বোলত তারা হয়ে গেছে ।
রেল লাইন এর ধারের বস্তিতে
একটা ছোট্ট ঘরে তার বাস,
চটের দেওয়াল আর ত্রিপল এর ছাদে
অসংখ্য ফুটোর উঁকিঝুঁকি ।
মা বড়বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতো,
মাকে বড় ভালোবাসতো দিপু।
দিনের শেষে ঘরে ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরত সে।
মা তাকে কাছে টেনে নিয়ে খাইয়ে দিতো ,
দুপুরে বড়বাড়িতে দেওয়া নিজের নাখাওয়া খাবার,
আর দিপু জিজ্ঞেস করলে বোলত খিদে নেই তার।
তবু দিপু জোর করে খাইয়ে দিত মা কে।
আঁচল দিয়ে তাখন চোখ মুছত মা।
সন্ধে বেলা রেল লাইন এর ধারে গিয়ে বসতো দিপু।
পাথর নিয়ে খেলতে খেলতে রেলগাড়ির আসা যাওয়া দেখত,
আর ভাবত বড় হয়ে মাকে নিয়ে সে চলে যাবে অনেক দূরে,
সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে কোনও অচিন দেশে,
অজানা কোনও নদীর তীরে ঘর বানাবে সে,
লেখাপড়া শিখে বড় চাকরি করবে ,
কাজ করতে তাখন দেবে না সে মাকে,
বড় মোটরগাড়ি চোড়ে মাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবে মাঝেসাঝে,
এভাবেই হাসি কান্নায় কেটে যাচ্ছিল দিন।
তারপর একদিন কালবৈশাখীর মত আচমকা ঝড় এল
এলোমেলো হয়ে গেল দিপুর জীবন।
সেদিন দুপুরে রামুকাকা এসে বলল মায়ের অসুখ,
হাসপাতাল এ ভরতি আছে তার মা।
ছোট্ট দিপু চোখ মুছতে মুছতে ছুটে গেল হাসপাতালে,
মায়ের মুখ প্লাস্টিকের একটা ছোট মুখোশে ঢাকা।
তাকে দেখে মায়ের চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল জল,
নির্বাক হয়ে মাকে দেখছিল দিপু,
বুঝতে পারছিল না সে, কেন কাঁদছে মা।
একটু পরে ছোট মুখোশটা সরিয়ে
কাঁদতে কাঁদতে মা বলল আমার চোখের মনি তুই,
মনে রাখবি সারাজীবন আমি আছি তোর পাশে, ভালো থাকিস দিপু।
সেটাই শেষ কথা ছিল মায়ের,
তারপর হঠাৎ যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলো মা।
ছুটে এল ডাক্তার নার্সেরা ,রামুকাকা টেনে নিল তাকে।
কিছুক্ষন পরে ডাক্তার এসে বলল মা আর নেই।
হাসপাতালের খাটে মায়ের নিথর শরীর ,
দাড়িয়ে আছে দিপু,কান্না আটকে গেছে বুকে,
হয়ত মা ঘুমিয়ে আছে , জেগে উঠবে এখুনি,
মা আর নেই মানতে চাইছে না সে,
মা তাকে বলেছে সারাজীবন থাকবে তার পাশে ।
তাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না মা,
বড় ভালোবাসে যে তাকে।
তবু চলে গেছে মা, বাবার মত আকাশের তারা হয়ে গেছে।
গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে মাকে জড়িয়ে ধরতে চায় সে,
শূন্য বিছানায় একা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ছোট্ট দিপু,
মায়ের পুরানো শাড়ি জড়িয়ে খুজে পেতে চায় মায়ের আঁচল ।
চোখের জলে ভিজে যায় পুরানো শাড়ি , তবু মা আর আসে না,
বুকে টেনে নিয়ে আর মুছিয়ে দেয় না চোখের জল।
তারপর একদিন মায়ের ছবি আঁকড়ে এক অজানা ট্রেনে উঠে বসে সে।
তাকে নিয়ে ট্রেন হারিয়ে যায় দিগন্তে ,
মায়ের স্মৃতিমাখা সেই ভাঙা ঘর ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূরে।