আমরা সবাই পাগল বলি তাকে ,
গভীর চোখ, ঝাঁকড়া চুল, পরনে ছেঁড়া জামাকাপড় ।
রাস্তাতেই তার থাকা খাওয়া , রাস্তাতেই তার ঘর।
গ্রীষ্ম, বর্ষা ,শীতে তার ঠিকানার পরিবর্তন হয় মাত্র ,
কখনও সে ঠাই নেয় খোলা আকাশের নীচে ,
আবার কখনও চণ্ডীমণ্ডপের এক কোনে ।
গভীর ভাবুক দুচোখ মেলে সারাদিন
আকাশের দিকে চেয়ে কি যেন খুঁজে ফেরে সে,
আর মৃদু স্বরে বলে চলে আমি কে??
কেউ জানে না কোথা থেকে সে এসেছিল ,
আর কারাই বা তার আপনজন ।
সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তাকে ,
আমরা সবাই বলি তাকে পাগলা বুড়ো ।
দুপুরে, রাতে পাড়ার লোকেরা দুমুঠো খাবার দেয় তাকে ,
আর বছরে দেয় কিছু ছেঁড়া জামাকাপড় ।
রাস্তাতেই তার থাকা খাওয়া , রাস্তাতেই তার ঘর ।
একদিন গেলাম সেই পাগলাবুড়োর কাছে,
সারাদিন বিড়বিড় করে সে কি বলে তা শুনতে ,
আমায় দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিল--
ঐ দেখ মহাশূন্য ,কি বিশাল, অকল্পনীয় ।
ঐ অসীমের মাঝে আমরা কে? কিই বা আমাদের পরিচয় ?
হাজার বছর আগে হয়তো এখানে বসেই
আমারি মতো কেঁউ জানতে চেয়েছিল তার পরিচয় ,
কিন্তু পারেনি, হয়তো আরও হাজার বছর লাগবে জানতে ।
আমি দেখেছিলাম বিষণ্ণতা সেই পাগলা বুড়োর চোখে ।
তারপর আরও বছর দশেক পরে
হঠাৎ একদিন শুনি সেই পাগলা বুড়ো আর নেই --
চণ্ডীমণ্ডপের এক কোনে,পাওয়া গেছে তার নিস্পন্দ শরীর ,
বন্ধ চোখ , যা আর কোনদিন আকাশের দিকে চাইবে না ,
বিড়বিড় করে কখনো প্রশ্ন করবে না আমি কে?
হয়তো সে পেয়েছে তার উত্তর ,
জেনেছে তার পরিচয় ,পেয়েছে শান্তি ।
আবার হয়তোবা অজানা উত্তরের আকাঙ্খায়
নুতন করে গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়েছে সে,
সেই পাগলা বুড়ো ।