শরতের অহোরাত্রে এই উদ্যানে একদিন—
আবারো সারা বেলা মুখরিত হবে বৃষ্টিতে,
মাঠের বুকে সেদিন নব্য ভূষায় আসবে
চামেলি,
নয়নতারা,
নাগবল্লি,
মালতীলতা—
বিহঙ্গের পাল উড়ে আসবে
ফুলকে উত্ত্যক্ত করার প্রশ্রয় পেয়ে।

পুষ্পের ভীড়ে ভরবে উদ্যান,
নরকের রূপ পাল্টানো পুষ্পের সান্নিধ্যে এসে ও
বদলাবে না সেই চেনা উদ্যানের রূপ;
সেই আঠার বৎসরের পুরানো
উল্লসমুখরিত উদ্যান,
যার চোখটা কোনো রমণী হতে ধার করা,
ময়দানটা যেন সমুদ্রকন্যা—
যার বুকে প্রজাপতির স্রোত
চিরহরিৎ তৃণের বক্ষোজের দুগ্ধ পান করে বাঁচে।

একদল ছটফটে চপল পায়ে হাঁটা বালক
সেদিন ও দিবে বেঁচে থাকার হুংকার।
যে গান শুনার আবদার কেউ করেনি,
যে গান কেউ কোনোদিন শুনতে চায়নি
উচ্চরোলে তাদের গলায় বাজবে সে গান;
উৎফুল্ল দর্শক সারিতে সারিতে—
গানের কথা ছড়িয়ে দিয়েছে পাখিরা,
পাখিদের আহ্বানে এসেছে মানুষ,
এ-মোড় ও-মোড় থেকে ছুটে এসেছে
দেহোপজীবিনী মজুর।

দিন গেল— সাথে গেল রাত; তারপর?
দিবারাত্রির মাঝে মধ্যাহ্নতপনের রোদে
হবে অবগাহন,
নক্ষত্ররা গামছা হাতে এসে
মুছে দিয়ে যাবে সারা দেহ।
দুরন্তপনায় ছুটন্ত বালকের দল—
তাদের শরীর দিয়ে ঘাম বেরোয় না,
বেরোয় পৃথিবীর দুষ্প্রাপ্য জল।

সবুজের বুকে দাঁড়িয়ে
কল্পনায় সমুদ্রে পা ভেজানো
বালকেরা আজ ও অর্বাচীন।
তারা বিষাদ চিনে না,
তারা বুঝে না হৃদয়েশ্বরীর বেদনা,
বালকদের চোখ দিয়ে দেখলে
পৃথিবীর বুকে যুদ্ধ থাকত না,
তাদের চোখ দিয়ে দেখলে
পৃথিবীর কোনো সংসার ভাঙত না।

শরতের কোনো এক রাতে
বালকদের একটি করে চোখ ঝরে যাবে,
আকাশের নক্ষত্ররা আর আসবে না,
তাদের জন্য ফুটবে না ফুল,
সবার চোখজুড়ে থাকবে বিষাদ,
সবুজে তাকালে ঝলমল করবে চোখ,

সেদিন—
এই বালকদের নাম পাল্টে যাবে,
বদলে যাবে সঙ্গী, চিরচেনা বঁধুর বদলে
বিছানার শিথানে থাকবে নিঃসঙ্গ পুষ্পাধার।