প্রবাস মানেই এক কঠিন পরিস্হিতির মুখোমুখি আপনি। এখন আপনি যতটা পরিশ্রমি হতে পারবেন ততটা বিজয়ী হতে পারবেন। আমি সব সময়ই একটু না অনেকটাই অলস।যার কারনে সেই ছোটকালে প্রায়ই বাবার মুখে শুনতাম,
পরিশ্রমে ধন আনে
পূন্যে আনে সুখ
আলস্যে দারিদ্রতা আনে
পাপে আনে দুঃখ।
আজ প্রবাসে আসার পর বাবার কথাটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আপনি যেদেশেই যান না কেন আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে।
আমরা এমনিতেই একটা অলস জাতি। তাছাড়া আমাদের দেশে মানুষ সঠিক পথে পরিশ্রম করতেও জানেনা। পরিশ্রমের মুল্যও যথাযত দেয়া হয়না বলে আমরাও পরিশ্রম করা থেকে দুরে থাকি। পরিবারের কেও একজন যদি প্রবাসে থাকেন,বিশেষ করা ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় বা অন্য কোন উন্নত দেশে তাহলে দেশে থাকা অন্যদের ভেতর একটা অহমিকাও কাজ করে। যার কারনে সবাই হাত পা ঘুটিয়ে প্রবাসীর পানে চেয়ে থাকেন। কোন কাজ করতে গেলে পাছে যদি পরিবারের ইজ্জত সম্মান কমে যায়। স্যরি, এই বিষয়টা মনে হয় আমাদের সিলেট অঞ্চলের মানুষে মাঝে মাত্রাতিরিক্ত।
কিন্তু আবার এই মানুষগুলোই প্রবাসের স্বপ্ন দেখে শুধু বড় থেকে আরো বড়লোক হওয়ার জন্য। সত্যিকার অর্থেই আপনি যদি কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে প্রবাসে অন্তত আপনার পরিশ্রমের মূল্য আছে। তবে তার জন্য আপনাকে সেদেশের বৈধ হতে হবে। কিন্তু আপনি যতদিন সে দেশের বৈধ হচ্ছেন না ততদিন আপনার উপর থেকে অনেক ঝড়ঝাপটা যাবে। সেই ঝড়ঝাপটা আপনাকে মোকাবেলা করে ঠিকে থাকতে হবে। সব দেশেই একই অবস্হা। পরিশ্রম,শুধু পরিশ্রম করেই আপনাকে কিছু অর্জন করতে হবে।
হা বলেছিলাম, আপনাকে বৈধ হতে হবে। আপনি যদি বৈধ না হন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে আরো কঠিন অবস্হা। আপনি আসার পরই প্রথমেই আপনার থাকা খাওয়ার ব্যবস্হা করতে হবে। হয়তো বাড়ি থেকে অনেক ঋনগ্রস্হ হয়ে এসেছে এখন সেই ঋন পরিশোধ করতে হবে আপনাকে। পরিবারের সকলেই হ্য়তো আপনার দিকে চেয়ে আছে যে আপনি দিলে তারা খাবে। এই অবস্হায় আপনি যখন কোন কাজ পাচ্ছেন না তখন নিতান্ত বাধ্য হয়ে আপনাকে ফুটপাতে ব্যবসা করতে হবে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাবলিক প্লাসগুলোতে এভাবে বাংলাদেশীরা নানারকম ব্যবসা করে যাচ্ছে। কোথাও কেও ছাতা বিক্রি করছে,কোথাও শীতের দিনে শীতের কাপড়, কোথাও বাদাম,কোথাও মাইছ-মারো,কোথাও বাচ্ছাদের খেলনাসামগ্রী। অনেকে আবার বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টে গিয়ে ফুল বিক্রি করছেন। আর এসকল ব্যবসা করতে গিয়ে পুলিশের বাঁধার সম্মুখিনও হতে হয়। কখনো কখনো পুলিশ ধরে নিয়ে যায় । আপনাকে হয়তো অনেকদিন জেলেও থাকতে হবে। অনেক সময় পুলিশ আপনার ব্যবসার সব মালপত্র উঠিয়ে নিয়ে যাবে,সাথে আপনাকে একটি অর্থদন্ড মানে জরিমানা করে যাবে। এই জরিমানা আপনি প্রথম দিকে না দিতে চাইলেও বৈধ হওয়ার পর আপনাকে অবশ্যই তা পরিশোধ করতে হবে। তবে আপনার জরিমানা কমাতে চাইলে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে অনেকটাই কমে আসে।তবে একটা অংশ আপনাকে পরিশোধ করতেই হবে।
একটা সময় ফুটপাতে ব্যবসা করেও কিন্তু অনেকে প্রচুর পয়সা কামিয়েছেন। প্যারিসের কথাই যদি বলি, আজকের অনেক বড়লোক আছেন যারা বর্তমানে ব্যবসাবানিজ্য করছে তারা এক সময় ফুটপাতে ব্যবসা করে করেই কিন্তু আজকের অবস্তানে এসেছেন। যদিও সেই আগের অবস্হা এখন আর নেই।
বাংলাদেশে আপনি যে ভাইয়ের টাকায় দামি মোবাইল ব্যবহার করছেন, মোটর সাইকেল হাকিয়ে ছুটছেন ,দামি কাপড় পরছেন, ব্রান্ডেড স্যান্ট ব্যবহার করছেন, সেই ভাইটি প্রবাসে বাদাম বিক্রি করছে সেটার খবর কি আপনি নিয়েছেন। আপনি যে মানুষটির টাকায় নতুন নতুন শাড়ি কিনছেন, প্রসাধনী কিনতে গিয়ে অযথাই টাকা উড়াচ্ছেন, সেই মানুষটি প্রবাসের কোন এক ফুটপাতে রোদ-বৃষ্টি, হাড়কাপানো শীত-বরফ উপেক্ষা করে মাইছ-মারো বা শীতের কাপড় বিক্রি করছে তার খবর কি আপনি নিয়েছেন। আপনি কি জানেন আপনার প্রিয় মানুষটির,প্রিয় ভাইটির স্বপ্ন আজ বাদাম আর মাইছ বিক্রিতে আটকে আছে ।