সেই মাত্র তেরো কিংবা চৌদ্দ বছর বয়েস
একটা লুঙ্গি আর লম্বা পাঞ্জাবী পরিয়ে
পরম মমতায় হাত ধরে একটা হাফিজি মাদ্রাসায়
ভর্তি করেছিলেন বাবা।
বলেছিলেন, কুরআনটা সহিহ শুদ্ধ করে সুর দিয়ে পড়তে শেখ,
মরণকালে শিওরে দাড়িয়ে সুরা ইয়াসিন পড়ে ফুঁক দিও,
মৃত্যুর যন্ত্রণাটা যাতে না হয়।
মাঝে মাঝে কুরআন তেলাওয়াত করে বখশিয়ে দিও,
কবরের আজাবটা যাতে কমে আসে।
মসজিদের ইমামের দায়িত্বটা নিতে পারলে
সারা জীবন সুখে শান্তিতে চলে যাবে।
আরো বলেছিলেন, আখেরাতের জীবনটাও উজ্জল হবে।
তাকেও সুপারিশ করে বেহেশতে নিয়ে যাব।

বাবার কথামত,সারা জীবন সুখে থাকার আশায়,
পরকালে জান্নাত পাওয়ার লোভে,
মা বাবা কে সুপারিশ করে জান্নাতে নেয়ার দায়িত্ব
মাথায় তুলে নিয়ে পাঁছ বছরে হাফিজি শেষ করি।
মাসে সাকুল্যে তিন হাজার টাকা মাইনেতে
গাঁ'য়ের মসজিদে মোয়াজ্জিনের চাকুরি নেই।
সেই থেকে অদ্যাবধি কতশত বনি আদমকে কালেমা শিখিয়েছি,
সুরা কেরাত শিখিয়েছি,
কুরআন তেলাওয়াত করতে শিখিয়েছি,
নামাজ পড়তে শিখিয়েছি,
আদব কায়দা পর্যন্ত শিখিয়েছি।

চাকুরি নিয়েছিলাম মোয়াজ্জিনের।
পাঁছ ওয়াক্ত নামাজের আজান দেব,
খতিবের অনুপস্থিতিতে নামাজ পড়াবো,
মক্তবে গাঁ'য়ের বাচ্চাকাচ্চাদের কুরআন শেখাবো।
যথাযতভাবে এই কাজগুলো করে গেছি;
সাথে কেয়ারটেকারেরও।
প্রতিদিন সকালে মসজিদ ঝাড়ু দেয়া,
সপ্তাহে একদিন মসজিদের দরজা-জানালা পরিস্কার করা,
ওজুখানা, টয়লেট সব কেয়ারটেকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

গাঁ'য়ের কারো বাড়িতে মিলাদের আয়োজন,
না করতে পারিন না,যতই অসুবিধায় থাকি না কেন।
কারো বাচ্চা জ্বরে প্রলাপ বকছে, আমাকেই যেতে হবে ফুঁ দিতে,আমার বাচ্চা জ্বরে পুড়লেও।
তাছাড়া, বিভিন্ন ইসলামিক দিবসে নানান আয়োজনে,
বাৎসরিক মৃত্যু দিবসে,
সব সব আয়োজনে উপস্থিতিটা একান্ত অপরিহার্য।
মুতাওয়াল্লী,সেক্রেটারীর বাড়িতে হলে ত আর কথাই নেই,
অনুপস্থিতি মানেই চাকুরি নট।

কত মুতাওয়াল্লী বিদায় নিয়েছেন পরপারে।
বিদায়ের যাবতীয় কাজ-
বরইপাতার গরম জলে গোসল করানো
কাপন পরানো
আতর সুগন্ধি লাগানো
কাছে বসে কুরআন তেলাওয়াত করা
সব,সবকাজ আঞ্জাম দিয়েছি, একান্ত দায়িত্ব মনে করে।

মসজিদে যখন চাকুরি নেই, মসজিদ ছিলো কাঁচা মাটির
তারপর, পাকা দালান উঠেছে।
মসজিদের দান খয়রাত- আয় বেড়েছে
বাজারে জিনিষপত্রের দাম বেড়েছে
শুধু বাড়েনি, আমার সেই তিন হাজারের মাইনেটা।

তবুও,
তবুও দুনিয়ার সুখ,আখেরাতে জান্নাতের লোভে পড়ে আছি।
জান্নাত পেয়ে যাব মনিবের ইচ্ছায়,কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু দুনিয়ার সুখ, সব যেনো গাঁ'য়ের মানুষের পকেটে।