নীল
নীলা
নীলাঞ্জনা
এরকম একশ একটা নামে তোমার কীর্তন করতে গিয়ে
আমার পরিভাষার হাড়ি, পাতিল, ঘড়া—কলস সব
শূণ্য হয়ে পড়ে
তবু তোমার জন্য ভালবাসার গুড়ির কোলাটি আমার
দিব্যি ভরা টুই টম্বুর হয়ে রয়
পূর্ণ ভার লয়ে কছ কছ করতে থাকে আমার ঘরে
বাঁশের মাচানে।
কী যাচ্ছেতাই ভাবেই না নির্ভর করা যায়
তোমার উপর!
কে বলে নারীর উপর পুরুষের কোন নির্ভরতা নেই
কোন দায় নেই
কোন দেনা নেই, কে বলে!
আমার তো জুতা সেলাই থেকে চন্ডিপাত
সবই তোমার জন্য ঠেকে থাকে, নীল!
যেমন ঠেকে থাকে একজন শিশুর
সবটা
উঠাটা, বসাটা, দাঁড়ানোটা
হাগাটা, মুতাটা, শৌচাটা
পরাটা, খাওয়াটা
মানে পুরো অস্তিত্বটাই ঠেকনো দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, এক
মানবীর সর্বংসহা কাঠিণ্যের উপর।
তেমনি আমিও
পুরুষ এক, পরগাছা এক
অকর্মন্যের ঢেকি একটা, তোমার গুতো—ঠেলা ছাড়া
এক পাও নড়ন—চড়ন হয়না, এই পুরুষ আমি’র।
তোমার শিক্ষার, যুক্তির শান দেওয়া গাছি দায়ে যখন
আমার গলা পড়ে
কান পড়ে
নাক পড়ে
মুখ পড়ে, তখন আমার বাদপ্রতিবাদ সব যেন
শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করে
পাল্টা কথা মদ্দাটা পরলোকে গমন করে
তক্কের মুতাঝাঠা হাত ফসকে পড়ে, ধুলোয় লুটায়
তখন
মনের উঠোন জুড়ে
এক হুটোপুটো খেলা শুরু হয়
আমার চিক্কুর মেরে
গলা ফেঁড়ে ফেলে বলতে ইচ্ছে করে—
নীল
নীলাঞ্জনা, স্কুল—কলেজের বারান্দায় ছুটোছুটিতে
তোমার দিল ময়দানের বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে
মানবিকতার ঘাস গজায়ে
বন হয়েছে এক,
সে বনে সাঁ সাঁ করে ধাবিত হয় ক্ষমা
স্নেহ, প্রীতি
মায়া—মমতা, ভালবাসার ডোরাকাটা
বলগা হরিণের পাল।
তোমার ভারসাম্য আক্কেল দাঁতের ধার ছুয়ে
আমি বিষ্ময়ে ঘায়েল হই শুধু!
কি দারুন বিজ্ঞানের দুল দুল ঘোড়াই চড়ে তুমি
আসমানের মালিকের খোজ—খবর কর!
পানিপড়া শিশি—বোতল ফেলে স্টেথোসকোপে
হ্রদস্পনদনের ঢক ঢক আওয়াজের নামতা গণণায়
ঝোক তোমার,
ভ্যানিটি ব্যাগও ঝুলাতে শিখে গেছ অনায়াসে
তবু ডিসকো ডান্সে পা বাড়াতে পারনা তুমি
কোন ভাবেই
নিশিত রজনীতে তাহাজ্জুত এর শরাব পান করে
মিটিয়ে দাও
তোমার নাইট ক্লাবের আমোদ—ফূর্তির টাটকা স্বাদ, গন্ধ।
তুমি যখন বল-
দিল থেকে, পরাণের ভেতর দরজাটা খুলে,
শতভাগ অনুভূতির সরপড়া, দুধ সাদা
ধপধপে সততা নিয়ে
যখন বল—
আমার মা-ই- তোমার মা
আমার বাবা-ই-
তোমার বাবা
তখন মনে হয়
পরকে অপন করার জঘন্য পঁচা এক মদ পান করে
নেশাগ্রস্ত মানবী হয়েছ তুমি এক,
এরকম লোকসানের নেশার ভান—তাড়ী
আজকাল কোন বাড়ির বউ গেলে!
তোমার সমাজবিজ্ঞানের “আমরা” বোধ
এত চাওড়া কেন, নীল!
এত বিস্তর কেন!
কেন অন্য দশজন নারীর মত পারনা
আমরা’র সংকীর্ণ মানেটাই করতে—
‘আমরা’ মানে আমি,
তুমি
আর
আমাদের বাবু!
এত বোকা হয় কেউ আজকাল!
তুমি বল ‘আমরা’ মানে আমি
তুমি
বাবু
আমাদের মা—বাবা, ভাই—বোন, দাদা—দাদী
পালপুরী সব।
তাহলে আর তোমার দেখ দেখ করতে করতেই
বাড়ি হয়ে যাবে কি করে!
কি করে গাড়ি হয়ে যাবে!
ভাল খাওয়া হবে
ভাল পরা হবে
কেমনে! কি করে! নীল!
তোমার জলদি যত্নে মানি ওর্ডারের টাকা যখন
গ্রামের বাড়ির ধ্বজ বেয়ে বেয়ে
আমার মায়ের, তোমার মায়ের
আমাদের মায়েদের ঘরে ওঠে,
হাট থেকে
হার্টের অসুখের বড়ি,
ডায়াবেটিসের ইনসুলিন যখন
হেটে হেটে বাড়ি পৌছায়
মায়েদের হ্রদয় তখন পরম আহ্লাদে
লাফ মেরে মেরে ওঠে,
ওষুধের শক্তিতে না যতটা
তার চেয়ে ঢের বেশি
তোমার ভালবাসার
ঠেলায়,
তোমার বানভাসী খেয়ালের
চোটে,
অপলক নজরের বসানো
পাহারায়।
তোমার জমা—খরচের খাত দেখে
খাতা দেখে
নিশ্চিন্ত চিত্তে, সুখে ইচ্ছে করে
স্থাবর
অস্থাবর,
বস্তুগত—অবস্তুগত, যা কিছু আছে আমার
সব ঝাড় দিয়ে জড়ো করে তুলে দিই
তোমার ছাক্কা দয়াময় হাতে।
তোমার নিতে—না—জানা মুঠো খুলে খরচা কর যেখানে যা লাগে
দিয়ে দাও যা মনে হয়
যত ইচ্ছে তত
তোমার মাকে, আমার মাকে
যাকে ইচ্ছে তাকে।
নিত্য যখন দেখি
ফেরেনা শূণ্য হয়ে তোমার দিকে বাড়ানো কোন হাত
যে কারো হাত
নিকটের কিংবা
দূর সম্পর্কের কারো
অনটনের হাত
তখন হ্রদয়ের অন্দর মহলে আমার আনন্দের অথৈ জলে
ভেসে ভেসে যায় দোয়ার দরখাস্ত এক —
নীল
নীলা
নীলাঞ্জনা
তুমি গুরু খুব ভাল!
আজীবন পূর্ণ থাক
তোমার মহিয়সী হ্রদয়ের গোলা।
মানবতার দেউড়ি থেকে তোমার
না ফিরুক
কোন নির্ধন বাড়ানো বাহু
কোন দিন
কোন কালে। আর
তোমার হউক এক সুখের রাজপুরী
এ কালে।
পরকালে।