সমাজের সাম্প্রতিক ঘটনা কবিদের কলমে উঠে আসাটাই স্বাভাবিক।আমাদের পশ্চিমবঙ্গীয় নামী কবিদের কলমেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক বিশ্ব-কাঁপানো ঘটনা উঠে আসছে জ্বালাময়ী শব্দসম্ভারে। স্বভাবতই দামাল তারুণ্যের জয়গান গাওয়া চলছে। মুণ্ডপাত চলছে উপাচার্যের। আমিও ভাবছিলাম এ বিষয়ে কিছু কবিতা লিখি।একটু রেখেঢেকে লিখেওছি একটা 'ছড়াছড়ি ১৬"।
প্রগতিশীল কবি সাজার বাসনায় ছাত্র আন্দোলনটির সমর্থনে বানিয়ে বানিয়ে আমিও জ্বালাময়ী কবিতা লিখতে পারি, কিন্তু তাতে অন্তরের সায় থাকবে না। আমি চিরকাল অন্তর থেকে যা বিশ্বাস করি সেটাই কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করে থাকি।তাতে কে কি ভাবলো, আমার কিচ্ছু যায় আসে না। অন্তত বিবেকের কাছে পরিস্কার থাকা যায়।
এখন, আমি যাদবপুরের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন সমর্থন করতে পারছি না অন্তর থেকে।তাহলে এই থিমের উপর কবিতা লিখলে স্বভাবতই আন্দোলনটির বিপক্ষেই লিখতে হবে, অর্থাৎ সেটি নামী-দামী কবিদের বিরুদ্ধাচরণের সামিল হয়ে উঠবে।এ ক্ষেত্রে একজন স্বাধীনচেতা সৌখিন কবির কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
যাই হোক, যাদবপুরের ঘটনাটি সম্পর্কে আপাতত কবিতা নয়, নিচের গদ্যটি উপস্থাপন করলামঃ-
আনন্দবাজারের 'সম্পাদক সমীপেষু'তে প্রাক্তন পুলিশকমিশনা্র নিরূপম সেনের স্মৃতিচারণায় জানা গেলঃ
১৯৬৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ সেনকে বামপন্থী ছাত্ররা দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখার খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান এবং দেখেন, এক ছাত্র নেতা উপাচার্যকে ক্রমাগত লাথি কষিয়ে চলেছে। এতদসত্ত্বেও উপাচার্য মি.সেন নিরপমবাবুকে দেখে বলেন, 'তোমরা কেন এসেছো? 'আমি তো তোমাদের ডাকিনি, তোমরা চলে যাও [ উল্লেখ্য নিরুপমবাবু মি. সেনের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। ] অন্য অধ্যাপকরাও তাঁদের চলে যেতে বলেন। ফলে নিরূপমবাবু সঙ্গী পুলিশ অফিসারদের নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন।পরে শোনেন, ঐ ছাত্রনেতা তারপরও লাথি মারতে মারতে উপাচার্যকে বলতে থাকে, ' আর কত লাথি খেলে পুলিশ ডাকবি বল্?' এভাবে আরও ঘন্টা দুয়েক ক্রমাগত লাথি কষিয়ে ছাত্রনেতাটি নিজেই ক্লান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দেয়।পুলিশ ডাকার দরকার পড়েনি।
অথচ যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎবাবু সেই প্রগতিশীল [বামপন্থী মানেই প্রগতিশীল, যেন প্রগতিশীলতার যাবতীয় স্বত্ত্ব ওদের কেনা] ছাত্রদের ঘেরাও থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে কি না রাতদুপুরে পুলিশ ডেকে বসলেন। সোনার টুকরো ছেলেদের আন্দোলনের চেয়ে তাঁর ইগোটা কি বেশি দামি? পিতৃতুল্য শিক্ষকদের তথা উপাচার্যদের তো ছাত্রদের লাথি খাওয়ার মহান ঐতিহ্য রয়েইছে, সেকথা তিনি ভুলে গেলেন কেমন করে?না হয় তারা একজন ছাত্রীকে ড্রাগের নেশার ঘোরে রাতদুপুরে নির্যাতন করেছে, তাই বলে দেশের সেরা মেধাবী তথা প্রগতিশীল বামপন্থী ছাত্রদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গড়তে হবে? তাও সেই কমিটিতে তাদের পছন্দমতো লোক রাখা হবে না? এ ভারি অন্যায় অভিজিৎবাবু।যতই আপনি সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম মেনে কমিটি গড়ুন, আপনার বোঝা উচিত,বামপন্থী মেধাবীদের অপরাধ ধরতে নেই, ওরা যা-ই করুক ওরা প্রগতিশীল, ওদের সাতখুন মাপ, বিরুদ্ধাচরণ করলেই আপনি প্রতিক্রিয়াশীল, সরকারের দালাল।
তাই আসুন, সস্তায় প্রগতিশীল হই, নিজের ছেলেমেয়েকেও বলি, যে শিক্ষক বামপন্থায় আস্থা রাখে না, তাকে ঘেরাও করো, লাথি কষাও, রাস্তা্য নেমে আওয়াজ তোলো, ' হোক কলরব' সে আওয়াজ বিশ্বের দরবারে পোঁছে যাক খবর-পিয়াসী মিডিয়ার হাত ধরে।-- আর আমরা যারা কবিসমাজে জায়গা পেতে চাই, এই থিমের উপর লিখে চলি একটার পর একটা জ্বালাময়ী কবিতা ...