কবিতা- ব্যাখ্যার দায় কার -- এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার আগে জানা দরকার কবিতা আসলে কি? খায় না মাথায় দেয়! কবিতার যুক্তিগ্রাহ্য সংজ্ঞা কি কয়েকশো বছরেও মেলেনি? বিতর্ক ছিল, আছে, থাকবে। সেসব বিতর্কে না গিয়ে এটি তো স্বীকার করতে হবে যে, কবিতা হল কবির মনে উদিত একটি বিশেষ ভাবের বহিঃপ্রকাশ? আর সেই ভাব প্রকাশের জন্য দরকার হয় সুচয়িত অর্থবহ শব্দের, শব্দগুলিকে হতে হয় সুবিন্যস্ত যাতে ছন্দ- লয়- অলংকারে লেখাটি কবিতার অবয়ব পায়।
এখন, ভাবই যদি কবিতার হৃদয় হয়ে থাকে তাহলে সেই ভাব পাঠকের মনেও অবশ্যই সঞ্চারিত হওয়া চাই।যদি 'বোদ্ধা ' পাঠকের মনেও সেই ভাব কোন দোলা দিতে না পারে তাহলে বুঝতে হবে, সেটি একটি ব্যর্থ কবিতা।
অনেক সময় দুর্বোধ্য কবিতার লেখক বলে থাকেন,আমি তো প্রবন্ধ বা গল্প লিখছি না যে সহজেই পাঠক সবকিছু বুঝে যাবে।আড়াল রেখেছি, তা সরানোর দায়িত্ব পাঠকের।" ঠিক কথা, নগ্নতা কবিতার বৈশিষ্ট্য হতে পারে না, একটু আড়াল থাকা দরকার।কিন্তু আড়ালটি কংক্রিটের দেওয়ালের মতো হলে চলে না, আড়াল হতে হবে মেঘের মতো, যাতে বোদ্ধা পাঠকের উপলব্ধির বাতাসে মেঘ সরে গিয়ে সূর্যের আলো কবিতাটিকে স্পষ্ট করে তোলে।
কেবল অযথা পাণ্ডিত্য দেখাতে গিয়ে অদ্ভুতুড়ে শব্দ-সমাগমে কবিতাকে দুর্বোদ্ধ করে তোলা কবির কাজ হতে পারে না।মনে রাখতে হবে, কবিতা লেখা হয় পাঠকের উদ্দেশ্যে।পাঠকই যদি কোন ব্যাখ্যা খুঁজে না পায় তাহলে সে দায় কবির, পাঠকের নয়।
(এখানে পাঠক বলতে যেকোন পাঠকের কথা বলছি না, প্রকৃত কাব্যরসিক ও কাব্যবোদ্ধা পাঠকের কথাই বলতে চেয়েছি ।)
সুতরাং দশজন বোদ্ধা পাঠকের দশজনই যদি কোন একটি কবিতার (নিজের মতো করে হলেও) কোন ব্যাখ্যা খুঁজে না পান তাহলে রচয়িতার উপরেই দায় বর্তায় ব্যাখ্যা দেওয়ার।তা সব পাঠকের কাছে যুক্তিগ্রাহ্য হতেও পারে নাও পারে, কিন্তু ব্যাখ্যা তো একটা দেওয়াই যায়।তা সত্ত্বেও তিনি যদি ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন তাহলে বুঝতে হবে সেটি কোন কবিতাই হয় নি।