🎤মানুষভেদে ভাবনারও ভেদ ঘটে। সব মানুষের চিন্তাভাবনা একই সুতোয় বাঁধা থাকে না। বস্তুতপক্ষে, সৃষ্টির এ এক বিচিত্র লীলা! মনুষ্যেতর প্রাণীদের কথা জানিনা। হতে পারে, তাদের চিন্তাভাবনা হয়তোবা একই সুতোয় বাঁধা। আর এখানেই হয়তো মানবজাতির বিশেষত্ব। কবি Suman তাঁর 'বন্দী মানব' কবিতায় নিজস্ব প্রকাশ্-শৈলিতে তুলে ধরেছেন চিরন্তন সেই অনুভূতির কথা।
🎇 বন্দী জীবন
- Suman
প্রতিক্ষণ সুখ খুঁজি
অসীমের কতটুকু নিজের করে পাই
হাজারো সুবিধায় ডুবে থাকি
আধুনিকতায় কাটে রাতদিন
তবুও পুরনো রয়ে যাই!
একান্ত আঙিনা জুড়ে অসংখ্য অসঙ্গতি
আমাকে সীমাবদ্ধ করে অনেককিছু
একদিকে প্রভাবশালী মুদ্রার অভাব
অন্যদিকে অজ্ঞানতার বিচিত্র অন্ধকার
গণ্ডিবদ্ধ আবর্তের সীমান্তে-
মানুষ হয়ে বাঁচার নানান সংস্কার
নিজস্ব ভাবনার জালে
-আমি এক বন্দী মানব!
চারদিকে চেয়ে থাকি মুক্তির আশায়।
🎤 এক একটা মানুষ যেন এক একটা দ্বীপ! সেই দ্বীপে চাই তার হাজারো সুবিধার সুখ। আধুনিকতার সকল সরঞ্জাম চাই তার হাতের মুঠোয়। অথচ চিন্তাভাবনায় আর মানসিকতায় সেই আধুনিকতার ছাপ সুদূর পরাহত। সেখানে সেই সংকীর্ণ সনাতনী ছাপই থেকে যায়। মুদ্রার চাহিদায় তো কোনোকালেই মানুষের কখনোই ঘাটতি পড়ে না। সে চাহিদার যেন সীমা নেই। আরো আরো আরো চাই, এই ভাবনার সীমা থেকে সে যেন বেরোতেই পারে না! কত কিছু জানার থাকে বোঝার থাকে গ্রহণ করার থাকে, সে কথা ভাবার যেন অবসরই নেই। তাই অজ্ঞানতার অন্ধকারে গণ্ডিবদ্ধ হয় তার চিন্তা ভাবনার পরিসর। নিজস্ব ভাবনা থেকে সে তখন আর বেরোতেই পারে না। অর্থাৎ নিজস্ব ভাবনার জালে তখন সে এক বন্দী মানব।
🎤 চিন্তাভাবনার দৈনতা বড়দের ক্ষেত্রেই ভয়ংকররূপে দেখা দিয়ে থাকে। "শিশুদের খেলনা ভাঙার" তুলনায় "ভারত ভাঙার" মতো বৃহত্তর হঠকারী কাজ করে থাকে বড়রাই। ( বাক্যটি রূপক অর্থে ব্যবহার করেছি)। আবার একে অপরের যুক্তি-খণ্ডনের খেলাতেও মেতে উঠতে দেখা যায় বড়দেরই।
সংগত বিতর্ক অবশ্যই সুস্থতার লক্ষণ এবং তা চিন্তাভাবনার পরিধিকে বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে। কিন্তু অহেতুক বিতর্ক অজ্ঞানতার পরিচায়ক । সেক্ষেত্রে অনেক সময় কারো কারো চিন্তার দৈনতা স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়, তা সত্ত্বেও কাউকেই নমনীয় হতে দেখা যায় না। অথচ ভুল স্বীকারে কখনোই কারো মর্যাদাহানি হয় না। বরং গ্রহণে-বর্জনে সুশিক্ষার পরিধি যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনই পরবর্তীতে বিড়ম্বনার হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। যাঁরা প্রকৃত গুণী অর্থাৎ চিন্তাভাবনার পরিধি যাঁদের বিস্তৃত তাঁরা শূন্য কলসের মত বেশি বাজেন না, বরং ফলভারে নত শাখার মত বিনম্র হন। সুতরাং একজন মানুষের পক্ষে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে তথা নিজস্ব সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনার পরিধি থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরী, নিজেকে মহত্তররূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।