ছড়ায় প্রাণ জুড়ায়, নবীন থেকে প্রবীণ সকলের। পড়তে বা বলতে যেমন ভালো লাগে শুনতেও লাগে সমান ভালো। মনেও রাখা যায় সহজে। কেননা, যে কথাগুলি আমাদের মনে আনন্দ দেয় ও সুরের ঝংকার তোলে সেই কথাগুলি আমাদের মন, ধরে রাখতে পছন্দ করে। আপনারা যাঁরা ছড়া লেখায় একেবারেই অভ্যস্ত নন অথবা তাল মাত্রার গাণিতিক হিসাব পছন্দ করেন না তাঁদের উদ্দেশ্যে বলি, ঘাবড়াবার কিছু নেই। ছড়ার মত বানিয়ে কিছু লিখে ফেলুন। তারপর সোচ্চারে পড়ে দেখুন, বেশ ছড়ার মত তরতরিয়ে পড়া যাচ্ছে কি না। আর অন্তমিল? তেমন কিছু কঠিন ব্যাপার নয়। প্রথমে দু লাইন লেখার পর পরের দু লাইন কি লিখতে চান ভাবুন। এরপর লাইন দুটির বক্তব্য একই রেখে শব্দগুলি এদিক-ওদিক করে অন্ত মিল যুক্ত জুতসই শব্দ অন্তে নিয়ে আসুন (তবে, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন , বাক্যটি যেন অবাক্য না হয়ে যায়)। প্রয়োজনে শব্দটির প্রতিশব্দ খুঁজুন স্মৃতি ভান্ডার থেকে অথবা অভিধান থেকে। আচ্ছা, আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে আমিই না হয় এভাবে একটা শুরু করে দেখি, প্রথমে থিমটা ভাবা দরকার। কি বিষয়ে লেখা যায় বলুন তো? হ্যাঁ রাজনীতি নিয়েই একটা ব্যঙ্গাত্মক ছড়া লেখার চেষ্টা করা যাক। প্রথম দু লাইনটা কী লিখি?? হ্যাঁ,এসে গেছে--
কর্তাবাবু ধূর্ত ভারি-
নাম লেখালেন শাসক দলে।
গুনে দেখলাম আপনা থেকেই স্বরবৃত্তে ৪/৪ মাত্রায় বিরাজ করছে লাইন দুটি।
এরপর চতুর্থ লাইনে অন্তমিল হওয়া উচিত দ্বিতীয় লাইনের সাথে। দেখতেই পাচ্ছেন, দ্বিতীয় লাইনের শেষ শব্দটি হলো 'দলে'। তাহলে 'দলে' শব্দটির সাথে একটি জুতসই অন্তমিলযুক্ত শব্দ চতুর্থ লাইনের শেষে বসাতে হবে। এখন, 'দলে'র সাথে মিল খায় কোন্ কোন্ শব্দগুলি? ভাবুন তো! ছলে, বলে, কলে ,তলে ,টলে ,জলে, কৌশলে' ইত্যাদি। তাহলে আগের দু'লাইনের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ভেবে ফেলা যাক পরের দু লাইন। এইতো বাহ্, এসে গেছে। ্্্্
আগের দলে নেই যে মধু-
ভাসুক তারা অথৈ জলে।
- যাক, আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে একখানা নতুন ছড়ার শুরুটা অন্তত করে ফেলতে পারলাম!
একটু আধটু ছন্দ পতন ঘটলেও কোন ক্ষতি নেই। লেখার পর পড়ে দেখবেন, যদি গতিময়তা বজায় থাকে ও ছড়ার মজা অক্ষুন্ন থাকে তাহলে হিসাবের দরকার নেই। আর যদি একান্তই তাল মাত্রা নিখুঁত রাখতে চান, তাহলেও ব্যাপারটা তেমন কঠিন নয়। লেখার পর দেখুন কোথায় কোথায় মাত্রা কম বেশি হচ্ছে। তখন প্রয়োজনে কোন একটি বা দুটি শব্দের বদলে তাদের কোন প্রতিশব্দ বসিয়ে দেখতে পারেন মাত্রা ঠিক রাখা যাচ্ছে কি না।
একই স্টাইলে রোজ রোজ কবিতা লিখতে কারো কি ভালো লাগে? কি জানি, আমার তো লাগে না। তাছাড়া মহান স্রষ্টার সৃষ্টি এই মহাবিশ্বের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতিই তো আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে ভার্সেটাইল হতে। তাহলে আসুন না নিজস্ব স্টাইল তো থেকেই গেল সুরক্ষিত, মাঝেমধ্যে অন্তত দু একটি ছড়া লিখে স্বাদ বদলাই। তাতে কবিতা রচনার উৎসাহ যেমন দারুণভাবে বজায় থাকে, একধরনের আত্মতৃপ্তিও মেলে।
* কবিতা সর্বদা কেবল পাঠাস্বাদ নেওয়ার জন্যই নয় বলে আমার মনে হয়। কবিদেরও একটা সামাজিক দায় থেকে যায়। সুতরাং কবি রুমা চৌধুরীর মন্তব্যের মর্যাদা রেখে আসুন না সমাজের কালো দিকগুলিকে এভাবেই ছড়ার মাধ্যমে সমবেতভাবে আবারও তুলে ধরি। অসচেতনভাবে লিখে ফেলা এবারের ছড়াটিও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই উপমহাদেশের বাস্তব প্রতিচ্ছবি, যার ভুক্তভোগি অসহায় আমজনতা। সুতরাং আসরের সকল কবির প্রতি আহ্বান রইল, নিজস্ব কবিতার পাশাপাশি এই উদ্যোগেও সামিল হওয়ার জন্য। আশা করি, আপনাদের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণে ছড়াটি একটি পরিপূর্ণরূপ পেয়ে যাবে।
কর্তাবাবু ধূর্ত ভারি
নাম লেখালেন শাসক দলে;
আগের দলে নেই যে মধু
ভাসুক তারা অথৈ জলে।
(এরপর সামঞ্জস্য রেখে ক্রমশ সম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন ছড়াটিকে নিজেদের মতো করে)
🎈 🎇 সমবেত ছড়া 🎆🎈
""""""""""""""""""""""
কন্যা-সন্তান নয়তো বোঝা
-বাংলা কবিতা ডট কমের কবিবৃন্দ
""''''''""""""""'"''""""'"''''
একখানি ব্যাগ পড়ে ছিল
রেল লাইনের ধারে-
দৌড়ে আসে হাজার লোকে
কার যেন চিৎকারে! 🎤 সহিদুল হক
খোকা একা ভ্যাবাচ্যাকা
দাঁড়িয়ে ছিল কোনে-
দেখছিল সে ব্যাগখানা ঐ
যেন আপনমনে! 🎤 অতনু দত্ত
'হয়তো আছে বিড়ালছানা'
বলছিল কেউ কেউ,
একটি কুকুর গন্ধ পেয়ে
করছিল ঘেউ ঘেউ। 🎤 জে আর এ্যাগ্নেস
থমকে দাঁড়াই ভাবতে থাকি-
কী-ই বা হতে পারে?
খুলে দেখি নবজাতের
শরীর নড়েচড়ে। 🎤 প্রনব মজূমদার
চিৎকার শুনে ছুটি সেথায়
হাজার লোকের ভিড়ে-
চেয়ে দেখি ব্যাগটি উঁচু
একটি শিশুর শিরে! 🎤 হুমায়ূন কবির
ব্যাগের ভিতর কান্না শুনে
সবাই হতবাক!
কে করলো এই কান্ডখানা
নিষ্ঠুর নির্বাক! 🎤 মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন
কেউ ছোঁয় না শিশুটিকে-
হয়ত হ্যাপার ভয়ে,
থাকত যদি মনি-মুক্তা
পলায় যেত লয়ে। 🎤 গোলাম রহমান
অপকর্মের ফসল ভেবে
রাখতে নিজের মান
কোন অভাগী ফেলে গেছে
বিধাতার এই দান! 🎤 মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান
নতুন প্রাণে নতুন আশা-
তবু পিতা এমন পাষাণ!
কন্যা কেন আজও বোঝা?
সেওতো জানি তারই সন্তান? 🎤 সমীর প্রামাণিক
শংকা মনেই ব্যাগ খুলেছে
নিঃসন্তান বিশু-
ঠোঁট ফুলিয়ে চাপা কান্নায়
অপূর্ব দেবশিশু! 🎤 শ্রাবনী সিংহ
মেয়ে শিশু পড়ে ছিল
দেখলাম ব্যাগে যারে;
ভীতিকান্না শব্দ শুনে
কোলে নিলাম তারে। 🎤 প্রবীর চ্যাটার্জী
এসেই মানুষ থমকে গেল,
শিশুর অর্তনাদ!
ঘৃণ্য জনের ভুলের মাশুল
শিষ্টতা বরবাদ! 🎤 মোঃ সানাউল্লাহ
ফুটফুটে চাঁদ জ্যোৎস্নামাখা
মিষ্টি শিশুর বদন,
দেখে সবার হৃদয় কাঁদে-
জুড়ায় তাদের নয়ন। 🎤 জাহিদ হোসেন রনজু
আমিও দেখি নয়নভরে,
দেখতে ভারি সুন্দর,
মায়া ভরা মুখটা তারি-
করতে লাগি আদর। 🎤 ডাঃ প্রদীপ কুমার রায়
দেবশিশুকে জড়িয়ে বুকে
জুড়ায় বিশুর প্রাণ-
বলল, "আমি নিয়েই যাব
বিধাতার এই দান। 🎤 আলোচক
বিশুর বউও ছুটে এসে
জড়িয়ে ধরে বলে-
যারই হোক এই শিশুকন্যা
রাখব আদরে। 🎤 মহ: সানারুল মোমিন
রক্তেভেজা দেহখানি
কোলে তুলে নিল-
দ্রুতবেগে ছুটে বিশু
হাসপাতালে গেল। 🎤 উত্তম চক্রবর্তী
ব্যাগের ভিতর ছোট্ট শিশু
পাবে এবার সুখ-
ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে,
দেখবে আলোর মুখ। 🎤 শম্পা ঘোষ
নাম রেখেছে বসুন্ধরা,
ঘর করেছে আলো-
বড় হয়ে হয়ত মেয়ে-
ঘুচাবে সব কালো। 🎤 স্বপন কুমার দাস
গরিব বিশু দিন চলে না
দিন আনে দিন খায়,
কোমল প্রাণ তার সে হৃদয়
দিল বিধাতায়। 🎤 সঞ্জয় কর্মকার
কষ্ট করে করছে মানুষ
দিন হয়ে যায় পার,
বিশুর ইচ্ছে তার এ মেয়ে
হয় যেন ডাক্তার।
মেধা ছিল দারুন মেয়ের,
বৃত্তি পেয়ে শেষে-
এফ আর সি এস পড়তে গেল
সুদূরের এক দেশে।
দেশে ফিরে গড়লো সে এক
দাতব্যখানা-
গরিব মানুষ চিকিৎসা পায়,
পয়সা লাগে না।
যে বাপ তাকে ফেলে দিল,
হয়নি বলে খোকা-
মেয়ে হওয়া নয় কোন পাপ
বুঝবে কি সেই বোকা? 🎤 আলোচক
* সকলেই খুব সুন্দর লিখেছেন। কিন্তু ছড়াটিকে অর্থময় করে তুলতে ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে অনেকের লেখা অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। অনেকের ছড়াতে খানিকটা পরিবর্তনও আনতে হয়েছে। এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আরো যাঁরা যাঁরা ছড়া লেখায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা হলেন সর্ব কবি মিলেটস, নাসির উদ্দিন তরফদার, কবীর হুমায়ূন, এম ডি সবুজ ,আশরাফ উজ্জামান , অজিত কুমার কর ও ড.সুজিতকুমার বিশ্বাস। যাঁরা মন্তব্যের মাধ্যমে উৎসাহ দান করেছেন তাঁরা হলেন সর্বকবি খলিলুর রহমান, নিখিল রঞ্জন বিশ্বাস ও মনোজ ভৌমিক। ভালো থাকুন সকলেই। যদি উৎসাহ পাই তাহলে এরকম কোন অভিনব প্রয়াস নিয়ে আবার আপনাদের সামনে হাজির হতে পারি। অংশগ্রহণকারী ও উৎসাহ দানকারী সকল কবিকে জানাই অজস্র ধন্যবাদ।