( কবি অনিরুদ্ধ বুলবুলের "বাংলা পদাবলী সাহিত্য " শীর্ষক আলোচনার পরিপূরক হিসাবে এই আলোচনার অবতারণা ।)
    
          ভাবলে অবাক লাগে আজ থেকে হাজার বছর  আগে আমাদের এই প্রাণের বাংলা ভাষার আদিরূপে কত সুন্দর পদ রচনা করে গেছেন আমাদেরই পূর্ব পুরুষেরা। শুধু তাই নয়, এই উপমহাদেশের শতাধিক ভাষা-উপভাষার মধ্যে সর্বপ্রথম কবিতা রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। ভাবলে বুকখানি গর্বে ফুলে ওঠে ।

            নেপালের রাজকীয় গ্রন্থাগারে লুকিয়ে ছিল  সেই অমূল্য সম্পদ যা উদ্ধার হয় পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর হাত ধরে 1907 খ্রিষ্টাব্দে ।মোটামুটি দশম  থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যেই রচিত হয়েছিল তাল পাতায় লেখা চর্যাপদগুলি। সাল, সংখ্যা ইত্যাদি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে কিছু মতভেদ থাকে থাক। আমি কেবল গ্রহণযোগ্যগুলিই উল্লেখ করবো।
    

           50টির মধ্যে 46টি পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। রূপকাশ্রয়ী পদগুলি 16 মাত্রার। অনেকে বলেন, সেগুলি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। সময়কে মূল্য দিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনায় যাব না । কেবল দু’একটি নমুনা তুলে ধরব যাতে বাংলা ভাষার আদিরূপ সম্পর্কে এবং আদিকবিদের প্রতিভা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

          লুইপা, কাহ্নপা, ভুসুকুপা, সরহপা, কুক্কুরিপা(মহিলা পদকর্ত্রী), প্রমুখ 23 জন কবির নাম পাওয়া যায়।
      
    লুইপা
কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পইঠো কাল।।
( শরীরের গাছে পাঁচখানি ডাল।
  চঞ্চল মনে ঢুকে পড়ে কাল।।)
--''-------------'----------

    কাহ্নপা
নগর বাহিরে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।
ছোই ছোই জাহ সো ব্রাহ্ম নাড়িআ।।
(নগর বাহিরে ডোমনি আছে তোর ঘর।
ওহে নেড়া ব্রাহ্মণ  আমায় স্পর্শ কর।।)
-----------------------------------

     কুক্কুরিপা
দুলি দুহি পীটা ধরণ ন যাঅ।
রুখের তেন্তুলী কুম্ভীরে খাঅ।।
আঙ্গণ ঘরপণ সুন ভো বিআতি।
কানেট চোরে নিল আধরাতি।।
সসুরা নিদ গেল বহুড়ী জাগঅ।
কানেট চোরে নিল কা গই মাগঅ।।
অইসন চর্যা কুক্কুরিপা এ গাই।
কোড়ি মাঝে একু হিঅহি সমাই।।
(গাভী দুইয়ে ভাঁড়খানি দেখো উপছায়।
গাছের তেঁতুল দেখো কুমীরেতে খায়।।
ভেদ নাই একটুও ঘরে আঙিনাতে।
কানের দুল চোরে নিল হায়! মাঝরাতে ।।
শ্বশুর ঘুমায় বধু একা জাগে ।
দুল তবে কার কাছে মাগে?
কুক্কুরিপার চর্যা এমনই যে।
কোটির মাঝে শুধু একজনই বোঝে।।)
----------------''-----''------'-----
--চলবে (এরপর শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, পদাবলী)