কবি প্রবীর চ্যাটার্জি তাঁর এক আলোচনায় ছড়া লেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেভাবে সাড়া মেলেনি। তাই ভাবলাম প্রিয় কবিদের উদ্দেশ্যে আরো একবার আহ্বান জানানো যাক ছড়া লেখার জন্য।

       ছড়া, পদ্য ও কবিতা। আমরা যারা নিরন্তর লিখে চলেছি, আসলে  কি যে লিখছি নিজেরাই অনেক সময় বুঝে উঠতে পারিনা। কিন্তু আমার মনে হয়, জেনে রাখাটা খুবই দরকার।

       🚩 ছড়া, পদ্য ও কবিতা। তিন রকম নাম যখন, তখন পার্থক্যতো একটু আধটু থাকবেই। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা তো ছোট বেলা থেকেই জেনে এসেছি এসবই হলো কবিতা। তাহলে কবিতাকে আলাদাভাবে একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীভুক্ত করা হল কেন? তবে কি ছড়া ও পদ্য কবিতা নয়? তাই যদি হয়, তাহলে আমরা যারা একটু আধটু ছড়া ও পদ্য লিখি তাহলে তারা কি কবি নয়? কেননা যারা কবিতা লেখে তারাই তো কবি! হৃদয়বিদারক প্রশ্ন নিঃসন্দেহে! যদিও ছড়া ও পদ্যের সংজ্ঞা নিয়ে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না।

       🚩 কিন্তু বিতর্ক আজও থামেনি কবিতার সংজ্ঞা নিয়ে। কেননা নানা মুনির নানা মতে বিষয়টি আজও ঘোঁট পাকিয়েই  আছে। হয়তোবা কোনদিনই এর মীমাংসা হবে না! এতদিন ধরে যেসব সংজ্ঞা চালু আছে তার সবগুলো তুলে ধরে পাঠকদের মস্তিষ্ককে ঘুলিয়ে দিতে চাই না।  বরং যে সংজ্ঞাগুলি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে তার দুই একটি তুলে ধরা যাক:-

       কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বলছেন, "যে লেখাটি সমকালের স্মৃতি বা স্বপ্নকে তুলে আনতে সক্ষম এবং একই সাথে সমকালকে অতিক্রমের যোগ্যতা রাখে তাকেই বোধ হয় কবিতা বলা যেতে পারে।"

       কবি বুদ্ধদেব বসু লিখছেন, 'বোঝা' কথাটাই অপ্রাসঙ্গিক। কবিতা আমরা বুঝি না, কবিতা আমরা অনুভব করি , কবিতা আমাদের বোঝায় না, স্পর্শ করে , আপন করে একটা সংযোগ, ভালো কবিতার প্রধান লক্ষণই এই যে তা বোঝা যাবে না, বোঝানো যাবে না।"

        কবি হুমায়ুন আজাদের মতামত খানিকটা কবি বুদ্ধদেব বসুর মতোই। তিনি বলছেন, "পুরোপুরি বুঝে উঠবো না, বুকে ওষ্ঠে রক্তে মেধায় সম্পূর্ণ পাব না, যা আমি অনুপস্থিত হয়ে যাওয়ার পরও রহস্য রয়ে যাবে রক্তের কাছে, তার নাম কবিতা।"

        🚩 এবার ছড়া ও পদ্য সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক। যদিও এ সম্পর্কে আমাদের সকলেরই কমবেশি বেশ ভালই ধারনা আছে। তবে আমারই অনেক সময় ছড়া ও পদ্যের পার্থক্য বুঝতে বেশ অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়। তবে পদ্য সম্পর্কে আমার নিজের যতটুকু ধারনা তা থেকে বলতে পারি, পদ্যে ছন্দ-মাত্রা ও  অন্ত্যমিলের বিষয়টি একান্তভাবে অনুসরণীয়। পদ্যে সাধারণত রুপকের আশ্রয় নেয়া হয় না। ভাবের সহজ প্রকাশ থাকে এবং আক্ষরিক অর্থই প্রাধান্য পায়।  

        যাকগে, ওসব কচকচিতে গিয়ে লাভ নেই। ওসব নিয়ে মাথা ঘামান গিয়ে বড় বড় পণ্ডিতেরা। জানতে কোন বাধা নেই তাই একটু জেনে নেয়া গেল এই আর কি। আমরা বরং ছড়া নিয়ে একটু মাথা ঘামাই। কেননা অনেক পন্ডিতই  বলে থাকেন যে পদ্য আজকাল আর চলে না। পদ্যের নাকি বিলুপ্তি ঘটে গেছে। রয়ে গেছে কেবল সাহিত্যের ইতিহাসে! চর্যাপদ যেমন কেবল দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরা হয় পদ্যেরও নাকি এখন সেই দশা। কিন্তু ছড়া সম্পর্কে এরকম কোন শুচিবায়ু কারো মধ্যেই নেই। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি বহাল তবিয়তে টিকে আছে। আশা করা যায়, যতদিন কাব্য সাহিত্য থাকবে ছড়াও থেকে যাবে স্বমহিমায়। তাছাড়া এমন কোন প্রতিষ্ঠিত কবি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যিনি জীবনে অন্তত দু-চারটি ছড়া লিখেন নি। যদিও ছড়া এখন আর শিশুতোষে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এর ব্যপ্তি ও বিষয়বৈচিত্র্য একে আরো  জনপ্রিয় করে তুলেছে। আমার 'ছন্দের সহজ পাঠ প্রথম পর্বে' লিখেছিলাম যে, ছড়ার প্রধান ছন্দ হল স্বরবৃত্ত ছন্দ। সেখানে এই ছন্দ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আছে। তবে মাত্রাবৃত্ত ছন্দেও ছড়া লেখা যেতে পারে। মাত্রাবৃত্ত ছন্দ নিয়ে আলোচনা আছে আমার 'ছন্দের সহজ পাঠ দ্বিতীয় পর্বে'।  যাঁরা আগ্রহী তাঁরা আরো একবার দেখে নিতে পারেন।

      🚩 ছড়া সম্পর্কে কবি হুমায়ুন আজাদ বলছেন,"ছড়া রচনা করেন যে কবিরা তাঁরা আজ অর্থহীন কথায় সুর ছড়াতে চান না স্বপ্নের ফুল ফোটানোর সাথে সাথে বাস্তবের আগুনও জ্বালাতে চান।"

        ছড়াকার আবদুল হাসিব বলছেন, "ছন্দ আর অন্তমিলের প্রতি যত্নশীল হয়ে হালকা চালে সহজ শব্দের সমন্বয় সাধন করে বিষয়কে প্রকাশ করবার জন্য যে পদ বা পদ সমষ্টির সৃষ্টি করা হয় তাকে ছড়া বলে।"

          🚩 আমি শুরুতেই ইঙ্গিত দিয়েছি যে, প্রিয় কবিদের ছড়ামুখি করে তোলাই আমার এই আলোচনার উদ্দেশ্য। তাহলে আসুন না সকলে মিলে একটি সমবেত ছড়া লিখে ফেলি। আলোচনা পাতাতেই না হয় একদিন 'সমবেত ছড়া' শিরোনামে সকলের নামসহ প্রকাশ করা যাবে। তাছাড়া নিজেদের পাতাতেও নিজেদের মতো করে ছড়া লেখার আহ্বান রইল সকলের প্রতি।
সমবেত ছড়ার শুরুটা তাহলে আমিই করে দিই:-
আপনারা যাঁরা আগ্রহী তাঁরা আমার এই চার লাইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের মতো করে লিখে মন্তব্যের ঘরে প্রকাশ করতে পারেন।
---
একখানি ব্যাগ পড়ে ছিল         ৪/৪
রেল লাইনের ধারে-              ৪/২
দৌড়ে আসে হাজার লোকে      ৪/৪
কার যেন চিৎকারে!               ৪/২
(এরপর কী হতে পারে, আপনাদের যে যার অনুমানের উপর ভিত্তি করে এভাবে আরো 4 লাইন লিখে ফেলুন মন্তব্যের ঘরে। একটু আধটু ছন্দ পতন ঘটলেও অসুবিধা নেই, ঠিক করে নেওয়া যাবে।)
**যেহেতু আলোচনা পাতায় কবিতা প্রকাশ করা ঠিক নয়, সেইহেতু ভাবছি আসরের পাতাতেই আগামীকাল (০৫/১০/২০১৮) ১৫.০০টায়  অংশগ্রহণকারী কবিদের নামসহ "সমবেত ছড়া" (১ম পর্ব) শিরোনামে এটি প্রকাশ করব। আর যদি আলোচনা পাতাতেই প্রকাশ করতে চাই তাহলে অবশ্যই ছড়া-বিষয়ক আরো কিছু শিক্ষামূলক আলোচনার সাথেই অংশগ্রহণকারী কবিদের নামসহ সমবেত ছড়াটি প্রকাশ করব। অংশগ্রহণকারী সকল কবিগণকে জানাই অজস্র ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। যাঁরা কখনোই প্রচলিত  ছন্দ-মাত্রা মেনে কবিতা লেখেননি তাঁরাও যে সাগ্রহে অংশগ্রহণ করেছেন এবং নিজেদের মত চেষ্টা করেছেন এটাই আমার এই আলোচনার সার্থকতা। সকলের প্রতি অনুরোধ রইল, তাঁদের যেন নিরাশ করা না হয়।
🎆 যাঁরা এখনো অংশগ্রহণ করেননি তাঁদের প্রতিও আহ্বান রইল এই অভিনব প্রচেষ্টায় শামিল হওয়ার জন্য।

দেবশিশুকে জড়িয়ে বুকে
জুড়ায় বিশুর প্রাণ-
বলল, "আমি নিয়েই যাব
বিধাতার এই দান।

এরপর কী হতে পারে? অর্থাৎ নিঃসন্তান বিশু দেবশিশুসম  কন্যাসন্তানটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর কিভাবে তাকে মানুষ করলো। কী নাম রাখা হলো শিশুটির। কন্যাটি বড় হয়ে কী  হলো, এ বিষয়ে লিখে ফেলতে পারেন আপনার মত করে চার লাইনের ছড়ায়।