কবি | মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম |
---|---|
প্রকাশনী | উচ্ছ্বাস প্রকাশনী |
সম্পাদক | মুনির আহমেদ |
প্রচ্ছদ শিল্পী | মুনির আহমেদ |
স্বত্ব | মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম |
বিক্রয় মূল্য | ১৫০ |
বইটি কিনতে চাইলে | এখানে ক্লিক করুন |
সৃষ্টিকুলের সেরা জীব, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত-মানুষ হলো সামাজিক জীব এবং সমাজবদ্ধভাবে বাস করে। মানুষের এই সমাজবদ্ধতার সাথে ভাষার উদ্ভবতা জড়িত রয়েছে। পরস্পর পরস্পরের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সংস্কৃতির সাথে ভাষার রয়েছে যেমন নিবিড় সম্পর্ক তেমনি এই ভাষার সাথে পৃথিবীর সকল ধর্ম তথা আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলামেরও রয়েছে এক অনবদ্য সম্পর্ক।
আমি বাংলাদেশী, বাংলা আমার মাতৃভাষা। মাতৃভাষা আমাদের অহঙ্কার ও গর্বের ভাষা। দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগ ও প্রাণ উৎসর্গের ঘটনা ইতিহাসে অনেক থাকলেও নিজ মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করে শহীদের অনন্য মর্যাদা লাভ করেছে এমন নজির বাংলাভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষার নেই। আর এই অনন্য নজিরের কারণেই আমরা পেয়েছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। যে দিবস প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি উৎযাপিত হয় সারা বিশ্বে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তথা ৮ ফাল্গুন ১৩৫৮ সালে বাংলা ভাষাভাষীর উপর উর্দু চাপিয়ে দেয়ার অনায্য আদেশের প্রতিবাদে ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। শোকাবহ এই ঘটনার অভিঘাতে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যা ক্রমবর্ধমান গণ-আন্দোলন রূপ নেয়। এই আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে গৃহীত সংবিধানে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।
কিভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পেলাম তার অতি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি জনাব রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কোর কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাব করে, যা ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সংস্থার ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে পাস হয়।
এই ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ, এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
আমি মুসলিম, ইসলাম আমার ধর্ম, আমার ভাষা বাংলা। জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে সাত হাজারের উপর ভাষা আছে। প্রতিটি ভাষাই আল্লাহর মনোনীত ভাষা এতে কোনই সন্দেহ নাই। প্রত্যেক মানব জাতির ভাষা, অঞ্চল, বংশ এবং গোত্র এসবই আল্লাহর নির্বাচিত বা পছন্দনীয় আর আল্লাহর নির্বাচন বা পছন্দের ওপর কারও কোনো অভিযোগ হতে পারে না, অভিযোগ তুলেও কোন লাভ নাই, আর যে ভন্ডরা প্রশ্ন তুলে ওরা জনগণের শত্রু, বিশ্বের শত্রু, ওরা ইসলামের শত্রু। ইসলামের শত্রু এজন্য বললাম যে, আজকে কারা আমার সোনার বাংলায় বাস করে সোনার বাংলার সংস্কৃতিকে ঘৃণা করে, বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে, ইসলামের পরিপন্থী ভাবে? ওরা কারা যারা বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে প্রচার করে? ওরা ভণ্ড মূর্খ মউদুদীবাদীর দল এবং ওদের দোসররা। ওরা বানোয়াট হাদিস প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। যেমন একটি বানোয়াট হাদিস, "তোমরা আরবদেরকে ভালোবাসো, কারণ আমি একজন আরবি, কু’রআন আরবিতে নাজিল হয়েছে এবং জান্নাতের ভাষা হবে আরবি।" ওরা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মাতৃভাষা বাংলাকে ঘৃণা করতে শেখায়। আশ্চর্য হলেও সত্য যে এসব ভন্ড মূর্খের দল এখনো আমার সোনার বাংলায় বাস করে।
আল্লাহ বলেন, 'আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। " (সুরা ইব্রাহীম, আয়াত : ৪।) সুতরাং এটা কি স্পষ্ট নয় যে, যেহেতু আল্লাহ পৃথিবীর প্রত্যেক জাতিতে রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাদের কণ্ঠে মাতৃভাষা দিয়ে বা জাতিসত্তার ভাষা দিয়েই পাঠিয়েছেন, সেহেতু এটাই প্রমাণ হয় এ ধরণীর সকল ভাষাই কোনো না কোন নবী-রাসূলেরই জাতিসত্তার ভাষা। আজকে আমরা ইসলাম জানি, মানি এবং বুঝি কিভাবে? নিশ্চয় যার যার মাতৃভাষায় ব্যাখ্যা এবং অনুধাবনের মাধ্যমে। মাতৃভাষার সাথে সংস্কৃতির যেমন রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক তেমনি এই ভাষার সাথে পৃথিবীর সকল ধর্ম তথা আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলামেরও রয়েছে এক অনবদ্য সম্পর্ক। একুশ নিয়ে, মাতৃভাষা নিয়ে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে কবিতা লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, আমরা সেই জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিতে জানি, কিভাবে বাংলা ভাষা বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হলো তা বিশ্বকে জানানো। আমার বন্ধু তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীর বন্ধু এবং সহকর্মী আছে, যেমন: ইন্ডিয়ান বিভিন্ন ভাষাভাষী, মালয়েশিয়ান, সিঙ্গাপুরীয়ান, ইন্দোনেশিয়ান, চাইনিজ, ফিলিপিনো, শ্রীলঙ্কান, বার্মিজ। এরা আমার লেখা পড়তে চায়। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, বিশ্বের অন্তত কিছু মানুষকেও যদি আমার সোনার বাংলার গর্বিত ইতিহাস জানাতে সক্ষম হই তবেই আমি সার্থক।
বিনয়াবনত
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
উৎসর্গ: আমার পরমপ্রিয় শ্রদ্ধাভাজনেষু জন্মদাতা পিতাকে।
কবি কিংবা কবিতা খুঁজে বের করার জন্য উপরের সার্চ বক্সটি ব্যবহার করুন।
Please use the above search box to find any poet or poems listed with us.