আজ হতে অর্ধশত বছর আগে যে পল্লিতে আমার জন্ম,
এত বছর পরও তার প্রেমের স্পর্শ,আদর,যত্ন ও কোল,
কাতর করে,আজও তিল পরিমান ভুলতে পারিনা আমি।
মাতৃকোলে, বিছানায় বেশি হলে আট-দশ মাস ছিলাম।
হামাগুড়ি দেয়া শিখেই চৌকি থেকে নেমে এসেছি মাটিতে।
মেঝে থেকে চৌকাঠ পেরিয়ে বারান্দায়, তারপর উঠানে।
উঠানের কাদা মাটিতে চারপায়ে হেঁটেছি বেশিদিন নয়।
একদিন দু’পায়ে হাঁটতে শিখেছি,সবার হাততালি পেয়ে,
সেদিনের খুশিটা কেমন ছিল তা অনুভব করা যায়।
তখন কেউ কোলে নিলে গড়িয়ে পরতাম মাটির টানে,
প্যাঁকপ্যাঁক,কুক্কুরু,ম্যাওম্যাও,ব্যাঁব্যাঁ,ঘেউঘেউ,হাম্বাহাম্বা
এরাই ছিল আমার শৈশবের আকর্ষণ ও খেলার সাথী।
আমাকে দেখার জন্য যারা ছিল এবং মায়ের চোখ ফাঁকি-
দিয়ে চলে যেতাম নদীর পাড়ে, পানিতে নামার আকর্ষণে।
কয়েকবার পানিতে ডুবেছি, পানি খেয়ে পেট ভরেছি,
জানিনা কীভাবে বেঁচেছি, এভাবেই পানিকে জয় করেছি।
সারাক্ষণ বৃষ্টিতে ভেজা,সাঁতার কাটার অফুরন্ত মজা পেয়েছি,
নদীতে,খালে-বিলে,পুকুরে,ডুবায় মাছ ধরার মজা ছিল অনন্ত।
হাত-পা,বুক ছিলে গাছে উঠা শিখেছি উনিশশ একাত্তর সালে,
সমবয়সীরা যুদ্ধবিমান দেখতে গাছে চড়তাম দলে দলে।
বাল্য বয়সে কালবৈশাখীর ঝড়ে পালিয়ে গিয়ে আম কুড়াতাম।
সাথে হত যদি প্রচন্ড বৃষ্টি-বজ্রপাত,তবে বেশি মজা পেতাম।
কামলাদের সাথে ধান রোপনে,জালা তুলতে, নিড়ানি দিতে
মাঠে যেতাম,তাদের সাথে মজা করে দুপুরের খাবার খেতে।
মাঠ-নদী,খাল-বিল,বন-জঙ্গল, আকাশ ও পাহাড় এদের সাথে
মিতালি আমার জনম জনমের, ভুলা নাহি যায় কখনও আহা!
নিজের বাড়ির জাম্বুরা, নারিকেল,আম-কাঠাল,কামরাঙ্গা-তেতুল,
পাকা গাব, চালতা-কুল,জাম-জামরুল,পেয়ারা-ডালিম, শশা ও মেওয়া,
যখন ইচ্ছে গাছ থেকে পেরে খেয়েছি, এ ফল আর যাবেনা খাওয়া।
পঁয়ত্রিশ বছরের শহুরে জীবনে অব্যস্ত হয়েও,ভুলতে পারিনা পল্লিপ্রেম।
আশা রাখি শেষ বয়সে হয়তোবা তোমার প্রেমে সারা দেয়ার সুযোগ পাবো।
তারপর তোমার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ফেলে, শায়িত হব অনন্ত কালের তরে,
দাদা-দাদি, মা-বাবা যেখানে শুয়ে আছে সেই সীমাহীন অন্ধকার মাটির ঘরে।