শৈশবে সুস্থভাবে বেড়ে উঠেছি সযত্নে,
গর্ভধারিণী আমার পল্লি মায়ের কোলে।
যে নিজের খাওয়া-নাওয়া পরিচর্যা ফেলে,
সর্বক্ষণ সেবা-যত্নে সুস্থ্য রেখেছে শিশুকে।
কিছুই স্পর্শ করিনি ছ’মাস বুকের দুধ ছাড়া,
ছয়মাস পর অন্য খাবার খেয়েছি প্রচুর,
সাথে জোর করে মাতৃদুগ্ধ চলেছে দু’বছর।
আমার ছোট ভাই কোলে আসার পরও-
আমি চেষ্টা করেছি মাতৃদুগ্ধ খাওয়ার।
সে সময় বোধ হয় ছিলনা দুধের ফিডার
শিশুকালে পাঁচজন পরপারে চলে গেলেও,
বেঁচে আছি চার বোন পাঁচ ভাই এ ধরাতে।
অশেষ প্রশংসা আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে,
শৈশব-কৈশোর কেটেছে আমার পল্লিতে।
যেভাবে আমরা মিশেছি পল্লির প্রকৃতিতে,
যে অফুরন্ত মজা উপভোগ করেছি সেখানে,
বাস্তব শিক্ষা লাভ করেছি আমার প্রিয় গ্রামে।
জীবনের প্রকৃত শিক্ষাই পল্লির পরতে পরতে।
আমাকে কেউ শিখায়নি সাঁতারকাটা,মাছধরা,
গাছে চড়া, জমি চাষকরা, ধানকাটা,মাটিকাটা।
শৈশবে মেলা থেকে খেলনা ও ঘুড়ি কিনেছি,
কৈশোরে ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়িয়েছি।
গাছে উঠে যত রকমের ফল পেরে খেয়েছি।
খাল-বিল নদীতে, নৌকা চালিয়ে করেছি মজা,
অগ্রাণে ধানের বদলে ফেরিওয়ালা দিয়েছে-
মুড়ি,রসগোল্লা,জিলাপি,গজা খেয়েছি করে মজা।
শীতে আম্মা বানিয়েছে হরেক রকম পায়েস, পিঠা,
চুলার পাশে মুছলা ও ঢেঁকিতে বসে খেয়েছি স্বাদে।
পল্লির অনুভূতি,মজা শহরের শিশুরা কোথা পাবে?
ক্ষণক্ষণে শীতে লেপের নিচে ঘুমাতে মায়ের সাথে,
সেই আরামের কথা মনে পড়ে যায় গভীর ব্যথায়।
মনে পড়ে কৈশোরে মায়ের পালকির সাথে সাথে-
দৌড়ে চলে যেতাম দু’মাইল দূরে নানার বাড়িতে।
শৈশবে যেতাম হয়তো মায়ের পাশে বসে পালকিতে।
নানার বাড়ির সামনে-পিছনে আছে বড় দু’টি দিঘি,
শানেবাঁধা ঘাট,পাড়ে মসজিদ,আম-জাম,নারিকেল গাছ।
গাছে উঠে প্রথম খেয়েছি ডাব,ইচ্ছেমতো নারিকেল নিয়ে-
নেমে নিচে,মজা করে নারিকেল খেয়েছি সাথীরা মিলে।
যতদিন থেকেছি ইচ্ছেমতো দুষ্টুমি করেছি ছিলনা কোন বাধা,
আমি বড়বাড়ির নাতি,নানার ছিল একমাত্র কন্যা আমার মাতা।
পরোয়া করতামনা কাউকে কেউ বলতোনা কিছু,করতাম যা-তা।
শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি ভুলা নাহি যায়, বুঝতে পারি এখন,
এমন কঠিন স্মৃতির পাতা ভুলতে পারি হয়তো মরণের পর।