ঠাট্টা নয়, এই লেখাটাই আমার জীবনের শেষলেখা। শোনে রাখো-
তুমি অনেক দূরে, মাঝে অনেক নদী ও রাস্তাঘাটের ভীড় লেগে আছে
জানি না তুমি শুনতে পাচ্ছ কিনা। তবু বলে রাখি-
আমার জীবনের প্রদীপ নিভে যেতে আর দেরী নেই।
জীবনের স্কুলে অদৃশ্য দপ্তরী ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে
আর কত? এইতো প্রাণখানা দৌড়ে ওপারের রাস্তাটা ধরে নিতে বাকি। এতটুকুই...
কত কাজ বাকি পড়ে আছে হিসেব নেই,
কত খেলা বাকি পড়ে আছে মাঠে,
কত রোদ হয়নি এখনো পোহানো,
কত বই পড়ব বলে বাড়ির লাইব্রেরীর তাকে তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছি।
আহারে। আর পড়া হবে না কখনো।
কত কথা বাকি আছে জানো?
আহারে কত শত কথা বন্দি পড়ে আছে আমার এই হৃদয়ের কারাগারে।
এতোদিনে এই নিষ্পাপ কথাগুলোকে বলে দেওয়া উচিত ছিল-
বলা হয়নি, ভয় এসে চুপ করে ডুব দিয়ে থেকেছে এই যে এইখানে-
হৃদয়ে, শরীরে, কন্ঠে, নদীতে, কারাগারে। কিংবা চিন্তার কারখানায়।
আজ মরে যাব। ছেড়ে যাব জীবনের মোটা মোটা সব অসহ্য শৃঙ্খল।
কী পাব মরে গেলে? বেহেস্ত? দোজখ? স্বর্গ? নরক? হেভেন? নাকি হেল?
নাকি ঘুমের মতন অতিকায় এক ঘুমে ডুবে যাব সহসা?
স্বপ্ন দেখব, দুস্বপ্ন, কিংবা সুখের মনোরম স্বপন?
নাকি অতিপ্রাকৃতিক কোনো আগ্নেয় আলো এসে আমাকে জ্বালিয়ে দিবে নিঃশেষে?
চিরকালের মতো আমি কি মিশে যাব সময়ের স্রোতে?
আর বেশি দেরি নেই। চলে যাব।
শুধু রেখে যাব অঢেল স্মৃতি্র প্রাসাদ আর কিছু ব্যর্থ কবিতার খাতা।
আমি মরে গিয়ে আর অন্য কিছু চাই না। শুধু চাই-
আমি যেন পরকালেও তোমার বিরহ পাই আর
তা দিয়ে কবিতার বিশাল বিশাল দালান গড়ে যেতে পা্রি।
তোমার বিরহ আমার কবিতাবাড়ির মজবুত ইট-চুন-সুরকি...
আমাকে তুমি অতি গোপনে ভুলে যেও,
আর যারা আমার কথা ভেবে ভেবে কাঁদে তাদেরও তুমি ভুলে যেতে বোলো এই আমাকে।
জীবন নামক রহস্য সাগরের ক্লান্ত নাবিক আমি, এই কবি।
(আজ এই শেষদিনে নাহয় নিজেকে কবি বলে দাবি করেছি, মার্জনা চাই)
পার হয়ে গেছি প্রায় রহস্যের সাগর, ঐতো সামনে পাড়, ঘন ঘোর ঘোলাটে।
হয়তবা ঐখানে ভীষণ হিম জমে থাকে, কুয়াশায় ডুবে থাকে চারপাশ।
আমি মিশে যাচ্ছি, এইতো এখন, অন্ধকারের সা্থে।
সুখে থেকো সব, সুখে থেকো...
--------------------
সূর্যসেন হল, দুহাজার ষোলো সন।