মোর হৃদয়ের পটে,ফোটে ক্ষণে ক্ষণে মরু আরবের ছবি,
যে মলিন ধূসরে, ফুটেছিল ফুল, বিশ্ব মানিক নবি।
যে তিক্ত কঠোর, বালুর পাথার মানবে করিত বর্বর,
সে তৃষিত পৃথুলে সৃজিল তবে মৃদুল শীতল নির্ঝর।
কহিতেছি আমি সেকালের কথা, ষষ্ঠ শতাব্দীর,
করিত যে জন অধিক শোষণ, তারে মানিত সকলি বীর।
মানবে মানবে ছিল নাকো প্রীতি, ছিল শুধু বঞ্চনা,
দুঃখী-কাঙালেরা জীবনের খতে লভিত যে লাঞ্চনা।
মানবের সুখ তরু হতে সেথা ঝরিত শুধুই পাতা,
দাস-শ্রমিকের মাস-খুনে সেথা ঘুরিত ধনীর জাঁতা।
মানুষ মানুষে তুলিত হাটে, বিকিত পণ্যের মতো,
‘দাস’ মানুষের নসিবে লভিত দুখ-জরা-ক্লেশ শত।
নব দুলালি আসিলে ধরায় পিতা-মুখ হতো ম্লান,
আলোর প্রদীপ হতো চরম বিষাদে, ভূতলে অবসান।

এমন নিশীথে আসিলেন নবি ‘রহমত-এ-আল আমীন’,
নূরের ঝলকে হইল রঙিন, এ আঁধারে ডুবি জামিন।
ইসলাম নামের খনিত্রে রাসুল ভাঙিলেন যত ব্যবধি,
দূর হলো সব ‘কু-আচার' আর ‘দাসবৃত্তি’ তৎ্ অবধি।
তাঁর তরে হলো নারী আর নরে বিভেদের অবসান,
কঁহিলেন,“মায়ের পূত পদতলে বেহেশত্ লভে সন্তান।”
শুভ্র-কালোর ব্যবধান ছিল নভঃ আর ধরাতলে,
নূরের পরশে দাঁড়িল সকলি অবন্ধুর সমতলে।
মানবতার নিভু সলতেয় আজি জ্বলে তাঁরই নবশিখা,
শান্তির তোয়ে ভাসে মরুভূ, ছিল যেথা মরীচিকা।
ন্যায়ের রাসুল ফেলিল আপনায় শত ক্লিষ্টের ঝড়ে,
সত্যের তরে কাটিল জীবন বিরহ আর প্রহারে।
আল্লাহর বাণী পোঁহুছিতে ধরায় সহিলেন ব্যথা-পীড়ন,
বহিত যেথায় জুলুমের ‘লু’, সেথা বহে মিঠা সমীরণ।

হে ‘সাইয়্যেদুল মুরসালিন’,
সহস্র দরূদ আঁপনার ’পরে, হতে এই ‘উম্মাতিন’।
আঁপনি আসিলেন বলিয়া জগৎ পেল মুক্তির তরী,
ভীতু-নিপীড়িত মোরা আজ তাই আঁপনার বাণী স্মরি।
আঁপনারি তরে দুখী মানবের চিত্তে জাগিল প্রাণ,
আঁপনি বিনা অধুনা ধরায় মানবতা ম্রিয়মাণ।
আঁপনার বাণী নিশিদিনে শুনি, হৃদে জাগে হিম্মৎ,
মজলুম মোরা বারে বারে ডাকি ‘ইসম-এ-মুহাম্মদ’।