বিকালে গোপালপুর গিয়ে
সন্ধ্যার পরে এলো বৃষ্টি
তা এমন মুষলধারে যে-
প্রকৃতিতে যেন ঘটছে অনাসৃষ্টি।
ধীরে ধীরে রাত বাড়ে
নাম নেই বৃষ্টি ছাড়বার
যে দোকানে বসে আছি
তারও উপায় নাই তাড়াবার।
রাত যখন দশটা বাজে
নুতুন ভাবে শুরু হলো মেঘের গর্জন
কাতন দা বললেন,
এটা বৃষ্টি ছাড়ার লক্ষণ।
তখন বৃষ্টি ছাড়লনা বটে
চলছে ঢ়িমে তেতালা তালে
আমি বললাম এই সুযোগে
মন্দ হযনা বাড়ীর দিকে আগালে।
কাতন দা বললেন,কি যে বলেন ভাই
এই দূর্যোগে,আমার বাড়ীতে চলেন-
কোন অসুবিধা নাই।
আমি বললাম জানি-
বৃষ্টি তো ছেড়েই গেল প্রায়
আজ যাই, অন্য কোন দিন যদি
পড়ে যাই অধিক অসুবিধায়
সে দিনের জন্যে-
এই সুবিধাটুকু হাতে রাথা যায়।
কাতন দা হেসে উঠে বললেন,
কি সুন্দর কথা
কিন্তু তাই বলে কি সেদিনের জন্যে
আজকের থাকা হবে সুধুই অযথা?
আমি উত্তর না দিয়ে
লাগলাম প্যন্ট গুছাতে
টর্চ লাইট ব্যক পকেটে গুঁজে
উঠে দাঁড়ালাম ছাতা হাতে
এবং বললাম,শুনেন দাদা-
বৃষ্টি হচ্ছে সেই সন্ধ্যা হতে
অনেকেই পারেনি বাড়ী যেতে
সঙ্গীও পেতে পারি মাঝ পথে।
ঘর থেকে নেমে,বাম হাতে ছাতা
ডান হাতে সাইকেল,বামে ঘুরে
সামনে চেয়ে দেখি
নিয়ন বাল্বের আলোয়-
দৃষ্টি যায় যত দুরে
রেল গেট পর্যন্ত ফাঁকা একেবারে।
অগত্যা সাইকেলে উঠে
লেবার লাইন পর্যন্ত এসে
দেখি দুইজন নাইট গার্ড
আমার পরিচিত,বন্ধ দোকানের
বানান্দায় বসে।
উচ্চস্বরে বলল,আরে মাষ্টার যে
দেখ কি কান্ড, যেতে পারবেন তো
নেতারা(ইব্রাহিম)এইতো গেল
আর একটু আগে এলেই হোতো।
অন্যজন বলল,তুমি যে কি বল
মাষ্টার কি আজ নতুন,বৃষ্টি হচ্ছে বলে?
রাত হলেই বা কি,অনেক দেখেছি
ও তো প্রায় একাই চলে।
মিলের বটগাছ না পেতেই
পিছনে অনুজ্জল বাল্বের আলো জানাল বিদায়
ডানে ঘুরে,সামনে নিকষ কাল অন্ধকার
ব্যক পকেটে টর্চ লাইট তবুও নিরুপায়।
সালাম নগরে ঢুকে
ডানে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে
বামে সালামের কবর,গাছের নিচে
জ্বলছে কয়েকটা জোনাকি-
আবার সেই হারে বৃষ্টি গেল বেড়ে।
আস্তে ধীরে আগাই আর
মনে মনে জায়গা খুজি দাঁড়াবার
না আছে বৈঠকখানা,না কোন চালা
চোরের উপদ্রবে মসজিদেও ঝুলে তালা।
সামান্য এগিয়ে ডানে ঘুরলেই
সালাম নগর শেষ,পশ্চিমে ভাঙ্গাপাড়া
উত্তরে অল্প একটু ফাঁকা
তারপরেই শুরু নেঙ্গপাড়া।
গ্রামের মাঝামাঝি এলে
একটা মুদি দোকান,ডাবলু দোকানদার
বারান্দায় জায়গা আছে দাঁড়াবার-
মাথাটা বাঁচে
কিন্তু ছাতার নিচে
আগেই গা ভিজে একাকার।
অইখানে দাঁড়ালে হোতো
তাতে হোতো সময়ের অপচয়
আর রাতও যেত বেড়ে
তা ছাড়া লাভ ক্ষতি কিছুই নয়।
তাই আগাতে আগাতে
এসে গেলাম পান্তা পাড়া
তবে বাড়ী ঘর কিছুই নাই
গাছ পালাও নাই,খোলা আকাশ ছাড়া।
তবুও নাম তার পাড়া।
এটা একটা কিংবদন্তি, এখনে
যা ঘটেছিল অনেক দিন আগে
আগের দিন সন্ধ্যা বেলা একটা ছাগল-
ধরে এনে পরদিন সকালে খেয়েছিল বাঘে।
যেমন বাঙ্গালিরা খায় পান্তা।
একটু পশ্চিমে দাঁইড়পাড়া
না পৌঁছতেই আবার মেঘের বিকট গর্জন
মনে মনে আস্বস্থ হই এই ভেবে
নিশ্চয়ই থেমে যাবে মুষল ধারে বর্ষণ।
আর একটু এগিয়ে জাফর সাহেবের বাড়ী
সেখানে ডান দিকে ঘুরে
সামনে ছোট্ট একটা তাল গাছ
হাতের বামে,অল্প দুরে,
দেখা গেল মেঘের ডাকের সাথেই
বিদ্যূতের আচমকা ঝলকে
মনে হল-
আশে পাশে ঘটেছে বজ্রপাত
ইতিমধ্যে চোখের পলকে।
মনে হল তার কিছুটা ছাতার উপরে
তাছাড়া ছাতাটা এত ভারী কেন
এক হাতে ধরে রাখতে বেশ কষ্ট
ওজন পাঁচ সাত কেজি বেড়েছে যেন।
মুখমন্ডলও ভীষণ জ্বলছে
যেন তা গিয়েছে ঝলসে।
তড়িৎ গতিতে সাইকেল থেকে নেমে
ওটা দাঁড় করিয়ে স্ট্যান্ডে,না থেমে
ডান হাতে লাইটটা বের করে
বাম হাতে ধরা ছাতার ভিতরে
আলো জ্বেলে দেখি
ছাতার শিকে ঝুলছে একি?
অবিশ্বাস্য কান্ড
বাদুড় একটা প্রকান্ড।
ওটা হয়ত থাকে
সেই তাল গাছে
বিজলী পড়ার ভয়ে
নিচে নামতে গিয়ে-
ছাতা পেয়ে যায় পাছে।
পেয়েছে আশ্রয়স্থল নিরাপদ
কিন্তু আমার যে কি বিপদ।
মুখমন্ডল জ্বলার কারন এবার স্পষ্ট
বাদুড়ের নখের আঁচড়ই দিচ্ছে কষ্ট।
এখনও চেয়ে আছে আলোর দিকে
ওর যাবার লক্ষণও দেখছি ফিকে
এমন একটা আশ্রয়স্থল
যেখানে নাই একটু বৃষ্টি
আমি যে একটা মানুষ
করতে পারি শত্রুতা-ক্ষতি-
সেদিকে নাই ওর দৃষ্টি।
মনে মনে বলি-
এই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকব নাকি?
ছাতাটা উপরে তুলে-
সজোরে দিলাম একটা ঝাঁকি।
তবুও নড়েনা ওই বেটা
একেবারে যেন অকর্মা ঠেঁটা।
মুখ দিয়ে করছে শুধু পুত পুত শব্দ
বুঝলাম ওকে করতেই হবে জব্দ।
লাইটটা চোখের কাছে ধরে বললাম-
বুঝে দেখ এইবারে
তখনই ডানা মেলে
উড়ে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।
ঘন্টা খাোনেক বাদে হলেও
কাতন দার কথাই হল ঠিক
আমিও ছাতা বন্ধ করে
সাইকেলে চেপে বাড়ীতে চললাম-
উত্তর দিক।
১৫-০৭-২০০০ইং।