রুহিতা তার নাম, এ নামের অর্থ আমি ও
যানতাম না
তার মা বাবা ও
জানতো কিনা আমি জানি না ।
তের বছরে রুহিতার প্রেমে পড়েছিলাম
নামের মত রুহিতা ছিল অপরুপ,
যেন প্রকৃতির কাছ থেকে রং চেয়ে এনে,
কোন নরম আঙ্গুল দিন রাত ওকে আঁকতো ।
সতেরো বছরে রুহিতা কে আমি বিয়ে করলাম
অভাবের সংসারে রুহিতার
সে রং খসে খসে পড়তে লাগলো ।
যেমন লোনা ধরা ঘর থেকে খসে খসে পড়ে চুন
সুড়কি,
স্বাদ থাকলে ও সাধ্যের কাছে তা সব সময় ই
নতজানু ছিল ।
সেই বার বিহারী পাড়ার
মেলা দেখে ফিরছিলাম,
পাশে বসে থাকা আধ বয়সি এক মহিলা বললো,
'বাবু চুড়ি নিবি' ?
'রং বেরং এর কাচের চুড়ি, নে না বউদির
লাইগা' ।
আমার কাছে তখন ছিল মাত্র দু টাকা !
আমি কিছু না ভেবেই হাত বাড়িয়ে দু
টাকা দিয়ে ১২ টি চুড়ি কিনলাম ।
রাতে বাড়ি ফিরে দেখি রুহিতা ঘুমিয়ে পড়েছে
আমার গলার শব্দে দরফর
করে উঠে দরজা খুললো ।
সেই মুর্হূতে ওর মুখের হাসি যেন সদ্য রাতের
আধাঁরে ফোটা এক সূর্যমুখী ।
আমাকে বললো, 'যান তাড়াতাড়ি হাত-
পা ধুঁইয়া আসেন আমি খাওন দিতাছি' ।
আমি হঠাত্ পিছন থেকে ওর হাত টেনে ধরলাম,
তারপর কাগজে মোরানো চুড়ি গুলো থেকে লাল
চুড়ি গুলি বের করে দিয়ে বললাম, 'এ
আমার দরিদ্র ভালবাসা'
কালো চুড়ি দিয়ে বললাম, 'এ আমার লুকায়িত
অজানা কষ্ট'
আর সাদা চুড়ি দিয়ে বললাম , 'এ আমার শত
ব্যার্থতার মাঝে সুখের ছায়ানীড়' ।
রুহিতা হঠাত্ কেঁদে দিল, আমি বললাম, 'এই
পাগলি আমি তো তোমার সাথে মজা করলাম' ।
যাও খেতে দিবা না , আমার খুব খিদা পাইছে
চোখের জল মুছে আমাকে খাবার দিল,
আমি খাচ্ছিলাম আর ও হাত
পাখা নিয়ে বাতাস করতে থাকলো ।
শোবার আগে ঘরের
সাদা র্ট্রাঙ্কে চুড়ি গুলো তালা দিয়ে রাখলো,
আমি বললাম চুড়ি পড়বা কবে ?
রুহিতা মুচকি হেসে বললো, 'কাল সকালে' !
আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম, সকালের স্নিগ্ধ সূর্য
আমাদের না বলেই উঠে গেল ।
আমি ও উঠে গেলাম, শুধু একজন ই উঠলো না,
রুহিতা !
আজানা ঘুম গ্রাস করলো রুহিতার চেনা শরীর ।
শুধু চকচকে তারার মত জেগে থাকলো লাল, নীল
আর সাদা চুড়ি ।
আজ ও সেই ১২ টি চুড়ি আমার কাছে এক-
একটা তিক্ষ্ন ছুড়ি হয়ে বুকে বিধছে ১২ মাস
।