চাই না আমি দামি খাবার, পাই না লবণ-ভাত;
ক্ষুধার সাথেই তর্ক চলে খাই নি কত রাত।
রাতের পরে রাত চলে যায়, দিনের পরে দিন;
জীবন জুড়ে ক্ষুধার জ্বালা, বাঁচার আশা ক্ষীণ।
হন্য হয়ে করছি আমি অন্য পথের খোঁজ;
অন্ন ছাড়া জীবন যেন বন্য প্রাণীর ভোজ।
আমার ঘামের ফসল নিয়ে পেট পুরেছ যারা;
একটুখানি আমার পেটের খোঁজ নিও আজ তারা।
পেটের দায়ে, পিঠের দায়ে ঘা সয়েছি কত;
আমার পিঠে দেখছ না কি রক্তজবার ক্ষত!
ক্ষত সয়েও রত আছি তোমার সেবায় আমি;
তারপরও কি তোমার কাছে পারছি হতে দামি?
ঘাম ঝরিয়েও নাম পাই নি, পাই নি আজও দাম;
ঘামের দামে কিনছি শুধু কষ্টে মাখা খাম।
ঘামের শপথ, দামের শপথ, শপথ চোখের জলের;
হার মেনেছি কার কাছে আজ? তোমার বাহুবলের!
আমরা না হয় বন্য মানুষ অন্ন খুঁজি খালি;
ঘামের দামে দাম না দিয়ে দিচ্ছ কেন গালি!
চাই না আমি দামি তোশক, পাই না মাটির মেঝে;
জীবন রণের যোদ্ধা হতেই জীবন গোবর-লেজে।
হাড়ভাঙা এই খাটনি খেটে ঘর জোড়া দেই রোজ;
আমার কানে জুটছে তবুও তুইতোকারির ভোজ।
আমার ঘামে ঘর পেয়ে আজ ধন্য হলে যারা;
একটুখানি আমার ঘরের খোঁজ নিও আজ তারা।
তোমার ঘরে এসি আছে, আছে হিটিং রুম;
তোমার হাতে কলম আছে, আছে সুখের ঘুম।
আমার আছে খুন্তি-শাবল, শক্ত দুটো হাত;
গ্রীষ্মকালের গরম, শীতের হাড়কাঁপানো রাত।
স্যাঁতসেঁতে রুম, মশার কামড়, করুণ জীবন পার;
চলতি পথে হোঁচট আমি খাচ্ছি রে বারবার।
স্বপ্ন দেখা বারণ, আমি নিম্নশ্রেণীর লোক;
চাই না হতে তোমার মতো রক্তচোষা জোঁক।
জোঁক না হয়ে সুখ খুঁজেছি, আজব স্বপন তাই;
নিজের ঘরের স্বপ্ন দেখার সৎসাহসও নাই।
নিজের ঘরের স্বপ্ন দেখা সে গুড়ে আজ বালি;
ঘামের দামে দাম না পেয়ে, পাচ্ছি কেবল গালি!
চাই না আমি রেশমি কাপড়, পাই না আবরণ;
শত তালির পোশাক পাওয়াই এক জীবনের পণ।
চোখ জুড়ানো দামি পোশাক দেখছি তোমার গায়ে;
দুঃখে মাখা পথে আমি হাঁটছি আদুল পায়ে।
সুঁইয়ের ডগায় লেগে আছে আমার রক্তের দাগ;
সেই আঘাতের কষ্ট-জ্বালা নাও নি তুমি ভাগ।
না নাও তুমি আফসোস নেই! কিন্তু ঘামের দাম–
না দিয়ে রোজ, দিচ্ছ ফাঁকি এ কী আজব কাম।
চাই না আমি সোনার হরিণ, পাই না অধিকার;
নেই অধিকার, করছি তবুও শ্রমিক জীবন পার।
সুঁইয়ের ডগার শপথ দিলাম, শপথ ছেঁড়া জামার;
একটুখানি কারণ হয়ো চোখের পানি থামার।
আমি হলাম তোমার জীবন সাজিয়ে দেওয়ার মালি;
আমার ঘামের দাম দিয়ে যাও; আর দিও না গালি।
পহেলা মে, ২০২৩
লামা, বান্দরবান।
#