দুঃস্বপ্নে ভেঙে গেলো ঘুমটা, কুয়াশায় ফাকা এ বসুধা।
সম্ভবতঃ আমি ছাড়াও একজন রাত্রি নেশাচারী
তার নেশার ফোয়ারা খুলে দিয়েছে।
শুধু এই দু'জন, আমি আর শিউলী ফুলের সুবাস
আবেগের ঝড়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল মনটা
ফিরে গেলাম সতের বছর আগে,
সেই অবাধ জীবনের মাঠে কত দিন কতক্ষণ
গেছে দু'জনের কেটে জীবনের নিয়ন উচ্ছ্বাসে।
সেদিনের জীবনটা ছিলো অন্যরকম, অন্য স্বাদের।
আজ সতের বছর পর সে আস্বাদন খুঁজে পাই,
খুঁজে পাই-খুঁজে বেড়াই... !
স্টেশন থেকে কলা ভবনে এক সাথে পথ চলা,
প্রতি দিনের সেই পরিচিত জারুল তলা,
কখনো সেন্ট্রাল মাঠের সবুজ ঘাসের পরে
পাহাড়ের পাদদেশে বসে-দূরে সীমানায় তাকিয়ে থাকা,
শেষ বিকেলের পাখিদের ঘরে ফেরা
আর লাল টগবগে সূর্যের অস্ত যাওয়া
এ সবের মাঝে কেটেছে বেলা।
প্রবল বৃষ্টির মাঝে একটি সে ছাতার নিচে
এক হয়ে পথ চলা।
স্টেশনের পরে বসে কাঁধে মাথা রেখে
গল্প শোনা জীবনের কথা বলা
চাকসুতে চা খেতে খেতে-শেষের কবিতা
‘শ্রীকান্ত’ বা ‘নারী’ নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়া,
‘বিদ্রোহী নয় নজরুল প্রেমের কবি
এ দাবী নিয়ে টেবিল ছাড়া।
ফাস্ট ফুডের দোকানে বার্গার বা পেটিস
খেতে খেতে কোকের বোতল নিয়ে টানাটানি
কতো যে ঘটেছে এ সবের!
সময়ই বা কই...
এমনও হয়েছে কতো, অনুযোগে-অভিমানে
পথের পরে পথ চলেও কথা না বলা।
সময়ের অজুহাতে টাইগারপাস থেকে ওয়াসার মোড়ে
ওয়াসা থেকে শিশু পার্কের পাড়ে
কতো যে কেটেছে সময় একই রিকশায় চড়ে-চড়ে।
কতো যে বলেছো তুমি শিউলি ফুলের ভালো লাগার কথা
সে শিউলির মুখোমুখি আমি, ভাবছি সে সব,
মাঝে মাঝে তুমি কথার ছলে বলতে,
বেঁচে থাকতে জীবনে টাকার প্রয়োজন আছে,
আমিও মেনে নিয়েছি সেদিন ।
বুঝিনি টাকার গন্ধে তোমার শরীর
কিভাবে উতলে উঠে।
ভাবতে পারিনি কতো দিনের বদল করা মন
তুমি এভাবে বদলে নেবে
বিদেশ ফেরৎ টাকাওয়ালীর সাথে গিয়ে
আমাকে এভাবে আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে দিবে!
সী-বিচের বালুচরে হাটতে হাটতে বলেছিলে
তোমার হৃদয় সাগর তীরে নাকি
আমার স্বপ্নগুলো আঁছড়ে পড়ে।
আজ দেখলাম এ সবের বিপরীত...
এ সবের কিছুই তোমার মনে পড়ে না,
কেঁপে উঠে না তোমার হৃদয়,
শিহরিত হয় না তোমার মাংসের দলা?
তোমার শরীরটাকে আমার শরীরের সাথে
মিশিয়ে দিয়ে বিড় বিড় করে বলেছিলে
‘এভাবে এক হয়ে রবে দু'টি জীবন'!
এসব কি কিছুই মনে পড়ে না, কিছুই না...
নাকি ইট পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে সব,
রঙিন দালান-কোঠার রঙ মিশানো
তোমার জীবনের সকল রঙ,
হয়তো বা নিশ্বাসে টাকার গন্ধ নিয়ে সুখ খুঁজে ফেরো,
নাকি টাকার প্রাচুর্যে মুছে গেছে সব জীবন থেকে !
নাকি খেয়ালের বসে আমার মতো,
আর কারো জলে ভেজাও দু'টি নয়ন!