পৃথিবী আমি দেখেছি এখন তোমার বড় দুঃসময়
তোমার সুরের উচ্ছল রাগিনী আজ
শংকার ভরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়।
প্রথম কৈশোরে সম্ভাবনার যে স্বপ্ন তুমি দেখেছিলে
যৌবনের উজ্জ্বলতায় তুমি ভাস্বর হবে বলে,
আজ তা কোথায় হারিয়ে!
তোমার গর্ভের জারজ সন্তানেরা মেতেছে আজ
তোমার গর্ভে ঘটাচ্ছে এক একটি মৃত্যু-মুর্তি ।
জন্ম দিচ্ছে ধ্বংসের এক একটি অশনি সংকেত!
আজ ভগ্ন দেহ কাঁপা কাঁপা অস্থিপঞ্জর পরে ভর নিয়ে
তুমি দাঁড়িয়ে ধ্বংসের তৃষ্ণার্থ সীমানায়,
নির্লিপ্ত করুণ দৃষ্টিতে ধ্বংসের মুখোমুখি হবার
প্রহর গুনতে গুনতে!
বি-ধ্বংসীর অবয়বে দেখছো তোমার
ধসে পড়া বিধিকৃত অস্থি মজ্জার ধ্বংসাবশেষ
তোমার নিনাদ আজ শব্দ শূন্য হয়ে তলিয়ে যায়
প্রলয়ের অট্টহাসিতে,
তোমার আগুন ঝরা বিদীর্ণ দীর্ঘশ্বাস বাতাসে
পৌঁছাবার আগে নিভে যায় ধ্বংসযজ্ঞের প্রমত্ত গহ্বরে।
তোমার আকাশে আজ
চাঁদ-তারা নেই, নেই সুরেলা গানের পাখি
বোমারু বিমান আর পরমাণুর ঝিলিক দেয় উকি,
তোমার বাতাসে নেই ফুলের সুরভি আর বিশুদ্ধ শ্বাস
তোমার বাতাসে পোড়া মাটির গন্ধ, মানুষের হাহাকার।
তোমার মাটিতে দেখিনা প্রভাতে
অভিমানে ঝরে পড়া শিউলী,
লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি।
তোমার মাটিতে আজ লেপটে থাকে
মানুষের পচা লাশ আর ভাঙা স্বপ্নের কঙ্কাল
তোমার মাটি ভেজে নাকো আর
ভোরের কুয়াশায় সিক্ত ভালোবাসা আর মমতায়।
তোমার মাটি ভেজে এখন
মানুষের চোখের লোনা জলে, লাল রক্তে।
পৃথিবী তোমার সকাল হয়না এখন পাখির কণ্ঠে
তোমার প্রতিটি সকাল এখানে গোলা-বারুদের
গর্জন আর মৃত্যু চিৎকার নিয়ে!
তোমার রাত এখানে করেনা বন্দনা, জপেনা ধর্ম মালা
তোমার সে রাত এখন মানবতাকে নিয়ে
খেলা করে, প্রভৃত্বের অহমিত্বে বিভৎস স্বপ্ন দেখে।
পৃথিবী তোমার এখন বড় দুঃসময়।
তোমার গর্ভের জারজ সন্তান
আজ তোমারই গর্ভে তুলেছে
অশান্ত প্রলয়, সর্বত্রই আজ দহন আর দগ্ধতা।
তোমার কপালে এঁকেছে মৃত্যু-তিলক
বুকে দিয়েছে স্বপ্ন ভাঙনের জ্বালা!
পৃথিবী তোমার রক্তের স্রোতে ভেসে আসছে
ঐ জারজদের অশুভ ইচ্ছের তরী ।
পৃথিবীর আজ তুমি ধ্বংসের মুখোমুখি
অপেক্ষায় ধ্বংসের সাথে পরিণয় বাসরের
পৃথিবী এখন তোমার বড় দুঃসময়..
(মে/২০০৫)