আজ আমার শুভ জন্ম,

কাল মুখে ভাত, পরশু পৈতে।

বংশধর সূত্রে প্রাপ্ত আমার জন্মদাতা পিতা,

আর তার পরম ব্রাক্ষণী আমার স্নেহময়ী মাতা।

কষ্টেসৃষ্টে যজমান পিতার আয় আসে যায় আনমনা,

আর মায়ের ঘরকন্না চলে অতি সাধারণ চালে ষোলোআনা।

তবু দিন চলে যায় অশন অনশন নিরসন চিন্তায়।

তবু কিসের একটা অভাব যেন বলে যায়,

"আজ নয় কাল,
কাল নয় পরশু।" একটানা-



বয়স আজ আমার আট, কাল নয়,

পরশু দশ হয় হয়।

ছেলেবেলার সাধ মেটাতে বাবাকে বলেছিলাম,

"বাবা একটা লাটাই আর ঘুড়ি কিনব,

দুটো পয়সা যদি?"

তাঁর ফ্যাকাসে মুখ বলে ওঠে,

"আজ নয় বাবা, দেব কাল-"।

আমি বলি, "কাল নয়, থাক বাবা, পরশু-"।

এইভাবে বৃথা আবদার স্তুপাকারে

জমে ওঠে, ভারাক্রান্ত ইচ্ছার খেলাঘরে।

এ ঘরে আসাযাওয়া সবাকার। তবু "আজ নয় কাল,

কাল নয় পরশু"- করে ওঠে ব্যর্থ হাহাকার।



মা, এই দস্যি অভিমানী ছেলের আজো কী

অভিমান ভাঙাও ওই দূর হতে দেখি?

যেমন বলতে, "বিপিন, আজ মোর দুরন্ত ভারি,

কাল ছিল শান্ত, তবে পরশু পাবে বড় চাকুরি।

যা খোকা, বেলা যে পরে এল, আর করিস নে দেরি।

ঠাকুরপো র দোকান থেকে দুটো চাল নিয়ে আয়,"

চোখে আঁচল দিয়ে বলতে, "যদি পারিস, ধার করি।"

কত বছর এইভাবে, কত চাল ডাল-

খুড়ো কে প্রার্থনা করেছি, "আর যে টাকা নাই, দেব কাল।"

তাঁর লোলুপ ব্যবসায়ী মন ধিক্কারে," ওরে ভিক্ষারী,
আজ নয় কাল,
কাল নয় পরশু, এ আর কতকাল!"



তবু কেটে যায় কাল, মহাকাল, ফেটে পড়ে শাপ, অভিশাপ,

মরে যায় মা, অনাহারে মরে বাপা।

শুধু হায়! মরে না এই হতভাগা, ক্ষণজন্মা বিপ্রদাস!

সময়াবর্তে "আজ, কাল, পরশু" তার করে হাঁসফাঁস।

আজ সে সদ্য বি.এ. পাস।

কাল কেরানিগিরি উমেদার, আর পরশু দিন কার

মেসের স্যাঁতসেঁতে ঘরে অপরিচ্ছন্ন এক বেকার।



তবু আরক্ত চোখে আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি।

গায়ে চাপাই তেল চিটচিটে সাদা-কালো চেক শার্ট।

হাতে নিই এক কবজা ভাঙা টিনের বাক্স।

পায়ে আমার বহু পথ চলা, ক্ষয়ে যাওয়া মুমূর্ষু চপ্পল,

উপহার পাওয়া একরত্তি ঘড়িটাও আজ থেকে

মেস মালিকের সম্পত্তি হয়ে উঠুক, এই আমার অশির্বাদ।

কাল থেকে আমি হব ভিক্ষারী, পরশু আমি-



এইভাবে, আজ আমার ষাট, কাল পঁয়ষট্টি,

আর পরশু-