নদীর ধারে আসি আজও
বসি একলা একা,
দিন পেরিয়ে রাত্রি নামে
হয় না কো আর দেখা।
স্মৃতিমাখা এই নদীর ঘাটে
শুধুই তোমার ছোঁয়া,
মিস্ করি আজ, তোমার হাতের
বানানো সেই মোয়া।
সেই দিনের ওই রক্তগোলাপ
আছে এখনো ঘরে,
বেঁচে আছি শুধুই তোমার
স্মৃতি আঁকড়ে ধরে।
নদীর ধারে ফোটে আজও
সারি সারি কাশ,
বইয়ের মাঝের চিঠিগুলো
করছে উপহাস।
নদীর মাঝে সেই মাঝিটা
আজও নৌকা বায়,
ঘাটের কাছে এসে মাঝি
আমার দিকে চায়।
একটু হেসে প্রশ্ন করে,
"পাশটা কেন ফাঁকা?
পাশে বসার মানুষটা কই?
আজ কেন তুমি একা?"
"আজ তোমার ওই মিষ্টি মুখে
নেই যে কোনো হাসি!
কাঁদছো কেন, কী হয়েছে,
রাগ করেছে মাসি?"
মাঝির দিকে তাকিয়ে বলি,
"বাদ দাও এসব কথা।
আমায় নিয়ে করছো কেন
নিজের মাথাব্যথা?"
মাঝি যেতেই, পানকৌড়ি
এসে যেন ডাকে,
আমায় বুঝি প্রশ্ন করে,
"হারিয়ে ফেলেছো কাকে?"
তোমার কথা সওয়াল করে
নদীর পাতিহাঁস,
ওদের জবাব পাইনা খুঁজে,
ফেলি দীর্ঘশ্বাস।
নদীর ধারের জেলে এসে,
ডাকে আমায়, "ভাইয়া!
কই গেছে আইজ, তুমার লগে
আইতো যে এক মাইয়া?"
মাছরাঙ্গা উড়ে এসে বুঝি
তোমার কথাই বলে,
ফিঙে বলে, "নয়ন দুটি
ভেজা কেন জলে?"
আমায় ডেকে প্রশ্ন করে
নদীর পাড়ের ভূমি,
"কোথায় তোমার মনের মানুষ,
কোথায় সেই দুষ্টুমি?"
ফেরিওয়ালা ডাকে না আর
কিনতে ঝিনুকমালা,
পাশে এসে দাঁড়ায় না সেই
ঝালমুড়িওয়ালা।
শীত-প্রভাতে চায় না কেউ আর
খেজুর রসের হাঁড়ি,
মেলায় গিয়ে হয় না কেনা
লাল-নীল কোনো চুড়ি।
রোজ বিকেলে বেজে ওঠে
অ্যালার্মের ওই বেল,
নদীর ধারে তোমায় ছাড়াই
কাটে পুরো বিকেল।
জেগে জেগেই রাত্রি কাটে,
তোমায় মনে পড়ে।
স্মৃতি জড়ানো হিজাবটা আজ
রেখেছি যত্ন করে।
তোমার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে
নদীর চারিদিক,
ঘাটের উপর আছে এখনো
তোমার সেই লিপস্টিক।
নদীর ধারেই কাদায় মাখা
এক কৌটো কাজল,
গাছের সাথে আছে বাঁধা
তোমার শাড়ির আঁচল।
স্মৃতির টানে নদীর ধারে
আসি রোজ প্রভাতে,
সাঁঝবেলাতেও দাঁড়িয়ে থাকি
তোমার অপেক্ষাতে।