# ডিমের সাম্রাজ্য। #
এখন টাকায় বাইশ গণ্ডা ডিম মেলে না চাঁদ
ওটা দাদুদের কালের সত্য
তাই ওরা চান করবার আগে গোবরে ভ'রে
গণ্ডাখানেক ডিম আকায় পুড়িয়ে খেয়ে চান করত,
তোমার দাদুদের নেংটো বেলায় টাকায় দুটো মিলত
ওই দরে এক-দু'টাকার ডিম এনে
গুষ্টিশুদ্ধ লোকের দোপরটো চলত।
পাঁচ ভাই-বুন মা-বাবা দোপরের ভাত
ডিম ছড়ানো পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে মজাসে খেয়েছি আধখানায় বাদলার দিনে খেঁচুড়ি খেয়েছি
ফিষ্টি করলে পুরো একটো পেয়েছি।
আমাদের মা বৌদিরা
দিনের পাতে প্রোটিন দিতে ডাল সয়াবিন রাখতো আমরা মাঝে মাঝে অবুঝ হয়ে বলতাম....
জল ফেরেঙ্গা মা গঙ্গা... খাবনা
মা পরদিন পুরু ক'রে করার কথা ব'লে বলতো... এবেলার মত খেয়ে লাও সোনা ।
এখন হয়েছে যুগের বদল
আমার এক দাদু হামেশাই বলতো..
" এখন যুগ হয়েছে পরিবর্ত, সব পাল্টিয়ে যেছে।"
তা কথাতো ঠিকই বটে:
ঘরবাড়ি থেকে ভাতের হাঁড়ি
সাজুকুজুর কত রকম শাড়ি
ছোঁড়াদের চুলের কাটিম
ছোট বড় কত্ত মোচ-দাড়ি,
শহর গাঁ-গঞ্জের হরেক খাবার,
পোলটির ডিম আর মাসের ছড়াছড়ি।
পতিদিন ভ্যান ফটফটি থেকে
ঠাঁসা বারো চাকা ষোল চাকা
ডিম আর বয়লার নিয়ে আসে
আর থামতে না থামতেই সব হয় ফাঁকা।
ভাবি লোকগুলান কি রাক্ষস হয়েছে
যে এক দিনেই লরি লরি গিলছে?
.... বটেও তাই ভাতে রুটিতে
চায়ে টিফিনে মেলায় খেলায় ট্রেনে
ডিম ডিম করে ডিমের মাদল বাজছে।
নাতি-নাতনিরা মাঝে মাঝে উল্টো পুরাণও গায়...
অমুক অমুক অভিনেতা মাছ মাংস ছোঁয়না
তমুক তুসুক ক্রিকেটাররা দুধের কিছু খায় না।
আমরা বলি বল কি
একেবারে ভাসুর ঠাকুর !
ওরা ভ্যাঁ পায় না
বলে সে আবার কি
বুঝতে পারি মুখের অম্বল হয়েছে
সামনে বলি ....এমনি বললাম ।
ওরা মাঝে মাঝে আমাদের শোনায় :
মিস্টার দাদু, তোমাদের প্যাঁ-পোঁ করার দিন শেষ
এখন এই স্মার্টফোনগুলোই হল...
আমাদের আলাদিনের প্রদীপ
প্রতিজনের কম করে দুটো ক'রে আছে
যা নিতুই যোগায় নতুন নতুন সন্দেশ।
বলনা কী চায়?
এক-দু মিনিটেই বলবে নিয়ে যাচ্ছি।
দাদুকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে
দাদু এটা করিৎকর্মাদের যুগ
তাদের জাল পাতাই আছে
একটা নয় দুটো নয় হাজার হাজার
হুকুম দিলেই বলবে
কোনটা ঝাড়বো বলুন।
দাদু তোমাদের যুগের মত
এখন লোকে দুবেলা ভাত মেরে
চাদরের তলায় থাকে না
কানে বিড়ি গোঁজার মত
এই গুটকা তো গোঁজাই থাকে ।
এ জানায় কোন আপায় কত ঢুকলো
কে কি করবে বা বলবে।
.... দাদু ওরা ওতেই ব্যস্ত
চোখ টেড়িয়ে যাবে
দেখলে এই সমস্ত।
সবিতারঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়