পড়াশোনার আলো জ্বলে স্বপ্ন ভাসে মনে,
বইয়ের পাতায় ঘুরে ফিরে হাজার ভাবনা কেনে।
জীবন গড়ার প্রতিশ্রুতি কত আশা লয়,
চাকরির খোঁজে পথে নামি অবহেলা রয়।

পড়াশোনার মায়ায় বাঁধা জীবন সবটাই,
বাবা-মায়ের কষ্টে গড়া স্বপ্ন দিয়ে তাই।
শেষে দেখি আয়ুর বাঁকে ক্লান্ত চোখের জল,
কোথায় আমার প্রতিদানে সুদাম্বর এক ফল?

অশিক্ষিত কিশোর কাজে দিনে পায় কি মজুরি,
কর্মফল তার দৃপ্ত হাতে দেখে কি মন ভরি।
পড়ার খাতা আজো খোলা আছি আমি থেমে,
চাকরির মঞ্চে মুখ থুবড়ে জেগে দেখি হেরে আজন্ম এক গেমে।

তবু স্বপ্ন ছুঁইতে চাই, আলোর হাত ধরি,
শিক্ষার পথিক হয়েই আমি চলব অন্তহীন প্রহরি।
যদি না হয় মোদের স্থান, শিক্ষা যেথা ব্যর্থ,
শহরের পথে দাঁড়াই তখন নীরবে তুলি প্রতিবর্ত।



বর্তমান সময়ে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। পড়ালেখা করে শিক্ষিত হওয়া, ভালো কাজ পাওয়া আর সংসারে প্রতিষ্ঠিত হওয়া—এগুলো স্বপ্ন হলেও, বাস্তবে এই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে গিয়ে সমাজের অসংগতি আর বেকারত্বের মুখোমুখি হতে হচ্ছে আমাদের।

যেখানে একদিকে শ্রমিকরা দৈনিক হাজিরায় ৫০০ টাকা আয় করে মাস শেষে ভালোই একটা আয় করতে পারে, সেখানে মাস্টার্স পাশ করা শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মাসিক বেতন মাত্র ১২-১৫ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ। অবাক লাগে, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কী তবে? এতো বছর ধরে পড়ালেখা করে খরচ করে শেষে কাজের ক্ষেত্রে সেই মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না। অথচ যারা অল্প বয়সে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে থেকে কঠিন পরিশ্রম করে আয় করে, তারা জীবনে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্থির হয়। সমাজের এই বৈষম্য একসময় এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে যে, অনেকেই মনে করছে শিক্ষা নেয়ার দরকার নেই, বরং কষ্টের কাজ করলেই বেশি আয় নিশ্চিত।

অনেকেই বলে, ভালো পড়াশোনা করলে, ভালো রেজাল্ট করলে ভালো চাকরি পাওয়া যায়। কিন্তু সেই ভালো চাকরি পেতে হলে আদৌ মেধা লাগে, না লাগে 'ডোনেশন' তা যেন সবসময়ই প্রশ্নসাপেক্ষ। মেধা থাকা সত্ত্বেও আমাদের সমাজে ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করার ব্যাপার যেন অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ রাষ্ট্র যদি শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের নিশ্চয়তা দিতে না পারে, তাহলে সমাজে এই অস্থিরতা আর বৈষম্য কেন?

রাষ্ট্র যদি শিক্ষিত মানুষের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করতে পারে, তাহলে এত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন কী? এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিলে তো পরিবারগুলো এতো টাকা খরচ করে সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য কষ্ট পেতে হতো না। বরং সেই অর্থটা সঞ্চয় করেই ভবিষ্যতের জন্য রাখা যেত।

অন্যদিকে বেকারত্বের চাপে ২৮ বছরের এক যুবক জীবন গড়ে তুলতে পারে না, সংসার পাততে পারে না। অভিবাহিত মেয়ে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সবার খোটা শুনতে শুনতে চুপ করে মুখ বুজে থেকে যায়। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে পরিবারে প্রতিষ্ঠা, সমাজে সম্মান পাওয়ার আশাও ফিকে হয়ে যায়।

এই পরিস্থিতি আজ এমন যে, আমাদের প্রতিদিন মনে হচ্ছে গাধার মত পরিশ্রম করলেও ফলাফল পাচ্ছি না। সমাজে এভাবে বৈষম্য থাকলে, শুধু শিক্ষার হার বাড়ালেই হয় না, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষা হতে হবে এমন, যা সত্যিকার অর্থে জীবনে কাজে লাগে।