চড়ুই পাখির গল্প
একটা গল্প শোনাতে চাই তোমাকে,
গতকাল রাতে বারান্দার চৌকাঠে,
কখনো হেলান দিয়ে কখনোবা মাথা ঠুকে,
মেঘ ভাঙা বৃষ্টির ফোঁটা একা গুনছিলাম।
আচমকা দুটি মেঘের গুড়গুড় ডাকে,
কার্নিশে বাসা বাঁধা চড়ুইয়ের ছানা গুলোর ঘুম ভাঙ্গে,
ওদের মা বাবা ভীষণ আগলিয়ে উষ্ণ সাহস দিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেয়,
বড্ড উৎকন্ঠে গুনগুনিয়ে বললাম,
আজ মা বাবা পাশে থাকলে হয়তো দাঁড়িয়ে ভিজতে হত না।
ভাবতে না ভাবতেই অবশিষ্ট মোমের আশ্রয়টুকুও নিভে গেল,
চারদিক ঘুট্ঘুটে অন্ধকার আর আমার ক্ষুধার্ত উদর হেসে জিজ্ঞেস করল,
কতোটা অসহায় হলে, পৃথিবীটা স্বার্থপর মনে হয়?
কতোটা অভাব শীর্ণ হলে আত্মা জীবনের চৌকাঠ মাড়িয়ে যায়?
নাহ! কোথা হতে কোন জবাব এলো না।
দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি তখনও থামেনি,
বৃষ্টির ফোঁটা গুনতে গুনতে আমিও সংখ্যা হারিয়ে ফেললাম শেষমেশ,
কিন্তু স্থির দাঁড়িয়ে আছি,
রক্ত চুষে সাদা হয়ে গেছে সমস্ত শরীর,
রক্ত চুষে নিয়েছে সমাজের জোঁক আর রাতের মশক।
ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে এলো,
তাহলে কী চৌকাঠ পেরোনোর কোন পথ নেই?
কোন কিছুই কি আর আমাকে সাহস দিতে পারল না?
তাহলে বুঝি আশার আলো হারিয়ে গেল।
মুহূর্তে ফুড়ুৎ করে বাবা চড়ুই উড়ে বারান্দার গ্রীলে এসে ডাকছে কিচিরমিচির,
মা পাখিটি ডাকে সাড়া দিয়ে উড়ে এলো,
ছানা গুলো ওদের উচ্ছ্বসিত গানে নতুন দিন পেয়েছে বুঝলাম।
চড়ুইয়ের আনাগোনা বেড়ে গেল
একে একে খাবার জোগাড় করে এনে সানন্দে বাঁচছে তাদের পরিবার।
আমাকেও বেড়াতে হবে।
হ্যাঁ হ্যাঁ আমাকেও ছুটতে হবে।
আমাকেও গাইতে হবে।
আমিও ওদের মত আলো দেখবো।
জানো, আমি তখন আমার গল্পের চৌকাঠ পেরুলাম।
পাটেশ্বর, কুড়িগ্রাম
রাত ১১ঃ০০