শোন, বাতাসেরা প্রণিধানী হয়ে শোন;
আমি বলছি এক মধ্যরাতের কথা।
যে রাতে আমার ঘুমেরাই দিয়েছিলো অবেলায় ঘুম,
আমি ঘুমোই নি, যেভাবে রাত ঘুমোয় না কখনোই।
আমি শুনশান শব্দদের খেলার সঙ্গী হয়েছিলাম-
মধ্যরাতের ঝিঁঝিঁ পোকারাও সেদিন পলাতক,
নেই আকাশের মাঝে ভাগ বসানো চাঁদ,
তারাদেরও বেড়িয়ে আসা মানা,
কেবল আমি আর আমার আত্মার শর্তহীন মুক্তি ঘোষিত হয়েছিল।
ঘোষিত হয়েছিল আমাদের বিরক্ত করবার ১৪৪ ধারা শাস্তিও।
আমি আজ বলছি সেই বীভৎস সুন্দর রাতের কথা-
আমার মাঝে যে আমিই থাকিনা, সেই দিনের আমার অভিজ্ঞতা!
বারোশ শব্দের বেড়াজালে আটকে থাকা গল্পের সেদিনই শুরু-
ঘোর আঁধারের রাতে আমি একাকীত্বকে কিনেছি ছ'শো অযুহাতে,
মেঘেদের পাওনা বাকী রেখেই বায়না করেছি তাদের,
সঙ্গে একরাশ দুঃখ নিয়ে ছুটছি তো ছুটছিই-
চার-চাকার লালনীল বাতীওয়ালা গাড়ির শব্দদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি গন্তব্যহীন গন্তব্যে,
ঝকমক রঙে রাঙানো সু-উচ্চ ইটের দালানের নিচে পিঁপড়ে হয়ে আমি-
আধঘন্টার সেদিনের সেই প্রতীক্ষা আমাদের ঠাই দেয় নি সেখানে!
বাধ্য হয়ে ফিরে চলা নতুন পথের দিকে, নতুন পথ যার কোন পথই নেই
পাঁচবারের প্রত্যাক্ষাণের পর অবশ্য ঠাই হয়েছিল আমাদের জন্ম-মৃত্যুর এক কারখানায়।
পাঁচতলার সেই মেঝের মাঝেই অত্যল্পকালের আনন্দ খুঁজে পাই আমি,
নিমিষেই ক্লান্ত হই দুঃখদের হইচই শুনে!
গল্পের ভেতরের গল্প শুরু এখানেই, যে গল্প আমাকে লিখেছিল নতুন নামে;
শুনশান শব্দ, মধ্যরাতের ঝিঁঝিঁ, আকাশের চাঁদ, তারাদের ছুটির সাথে মিশে ছিল এই গল্প;
রাত তখন সকাল ছুইছুই, বিদায় জানাতে এসেছিল আমায়,
ভোরের আলো রওনা হয়েছে বাড়ি ফিরবে বলে,
পাখিদের ডাকতে গেছে নিয়োজিত পেয়াদারা,
মেঘেদের পালাবার খবরও দিতে বলা হয়েছে ততক্ষণে;
আমি প্রতিক্ষার সুবাধে শুয়ে শুয়ে ভাবছি এক নতুন দিনের কথা,
এক সুন্দর সকাল যা আমাকে জাগাবে, এক সুন্দর সকাল যা ফিরিয়ে দিবে আমাকেই আমার মাঝে।
অবশেষে সেই গল্পের সমাপ্তি হয়েছিল, সকাল এসেছিল শব্দের ঘাটতি নিয়ে-
বাকী গল্প শব্দের অভাবে লিখা হয়েছিল কেবল একটি শব্দে - মৃত্যু
আমি, আমার আত্মা, আমার ইচ্ছে, আমার শখ, আমার বেঁচে থাকা-র মত বাকী শব্দগুলো রয়ে গেল আজন্ম এই একটি শব্দের মাঝে, ধরা-ছোয়ার বাইরে-
সেদিন আমার সেই শব্দগুলোর মৃত্যু হয়েছিল,
আর আমি আমার হতে আমারেই হারিয়েছি আরেকবার!
লেখার সময়ঃ সাতাশ অক্টোবর দুই হাজার বাইশ