তিনি ঋজু এবং দৃশ্যমান। তার ছায়াকে কেন্দ্র করে মৃদুল বনস্পতী, গারো পাহাড় ঘন সবুজ বন গল্প বলে। আর্যাবর্ত থেকে আজঅব্দি তিনি কখনো জলে কখনো ডাঙায় শিখিয়েছেন কিভাবে সাঁতার কাটতে হয়। ঘর আলো করা আলোর পৃথিবীতে উঁকি দিয়ে দেখি চিত্রকর্ম তুলির আঁচড়, বিনা সূচে বিনা তাঁতে আশ্চর্য নির্মান।
তিনি সুপুরুষ ছিলেন। জলে কাঁদায় শিখিয়েছেন খেলা-আর এভাবেই বেড়ে উঠা প্রবাহমান নদীর মতো। নির্লোভ সহচর উৎস মুখে করেছেন আলিঙ্গন। আমরা তার বৎসগণ রুপান্তর ছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছি ডালপালা। তিনি আমাদের মাঝে আছেন, তিনি পিতা, বাবা আমাদের। সেই পর্বত আরোহীরা যারা একদিন কৈলাশে আরোহন করেছিলো, তারাও একদিন হার মেনেছে তার কাছে। স্নেহের পুষ্পার্ঘ এমন পরাক্রমশালী, ক্ষমতা অটুট। তিনি আমাদের সক্ষমতাকে তুলে ধরেন উর্ধে।
তার অদম্য স্পৃহা, জীবনিশক্তি আমাদের তেলে যুগায় মদদ। ছোট চিলেকোঠায় যা থাক তিনি ফিরিয়ে দেননি কখনো। কোন বাবা তা পারেনা। তিনি ও পারেননি। ঐশ্বর্য এখানে লাল কৃষ্ঞচূড়া হয়ে ফুটে। তার চোখের মনির ভেতর লুকিয়ে থাকা কষ্ট উপদ্রুত উপকূল ছুয়ে যায়। বুঝতে দেননি মোটে, ভেসেও অগাদ নদীর জলে। তার চশমায় শেষ বিকেলের রোদ পড়িমড়ি করছে । আজ রোদচশমায় কতোটুকু দেখি? বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে ফিরিয়ে আনা আমার কৈশোর, বৃষ্টিতে লুটানো কদম অথবা বন কেতকীতে ফিরে তাকানো উল্লাস তিনি ধরিয়ে দিলেন হাতে।
এভাবে একদিন পরম্পরা তৈরি হলে তার বাবা ডাকে মিলেছে উচ্ছাস। কখনো শর্তে কখনো শর্তহীন লুকানো কপাটে মেঘমালা জমা হলে, রোদ পড়লে আমরা তার ভাগিদার হয়েছি। মনে হয় রাজ্যজয় শেষে কাঠা কাঠা ধান-চাল তুলছেন উগাড়ে-ঊঠোনে। কখনো ঘাম কখনো ক্ষত উদগত হলে কাঁধের আশ্রিত গামছায় মেলেছে সুণিপুন শুশ্রূষা। মল্লযূদ্ধ শেষে চোখে জমেনি কেতুর, তাই বড় হতে হতে শিখেছি ধান ভানা। কবুতরের খাদ্যে থাকেনা বিষক্রিয়া- বাবাই দিয়েছেন শিখিয়ে ।
তিনি আছেন এখনো ঋজু। শতবর্ষ ধরে তিনি বেঁচে থাকুন। কাঁঠালীচাঁপা আর বেলফুলের গন্ধে। তাকে খুঁজবো আঙিনায় ঝুরঝুরি রোদে। বাবা আছেন থাকবেন জারুলে বটে, আর আমার একটু উঠোনের সমবয়সি ডালিমে। তার জল ভাঙা কাঁদা ভাঙার গল্প শেষ হবেনা।
০৯/০৬/২০১৪
লুটন।