পিচঢালা রাস্তার একপাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে,
বেশ কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি
আমি স্কুল যাই, কলেজ যাই
আর তাদের দিকে আড়িহয়ে তাকাই
কখনো সখনো নিজেরই কেমন একটা ভয় অনুভূত হয়
এরা বেঁচে আছে তো?
দিন যায় রাত যায়
পারদস্তম্ভের উচ্চতা বেড়ে দ্বিগুন হয়
পৃথিবী আরেকটু ধ্বসের দিগে এগোয়
গরমের এসিড হাওয়া, কম্বলের চাপে গরম হতে শুরু করেছে,
অনেক গুলো গাছ তাদের পাতা ফেলে পরিস্কার হয়।
তবুও তারা স্থির অচল
হয়তো তারা হাটতে ভুলে গেছে।
নতুবা তারা পাথর
সেদিন ভালোকরে দেখলাম তাদের
বুকের ওঠানামা করছে তো?
হ্যাঁ দিব্যি স্বাভাবিক
তবে তারা এরকম জড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে কেন?
আরেকটু চোখ বোলাতেই তাদের নতুন ভাবে আবিস্কার করলার
তারা অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত,
ঠিক দেবী দুর্গার মত নয়
তবে তাদেরো অস্ত্র আছে
কারো হাতে মোবাইল
কারো হাতে ক্যামেরা
কিংবা কারো ক্যান্ডেল
কারো হাতে কালো কাপড়
কারো হাতে রক্ত নাহ,
ওসব রক্ত নয়, আলতা বোধহয়
কারো হাতে অলেখা বেনার
সদ্য জন্মানো শিশুর মনের মত।
ভাবালো খুব।
এরা এসব নিয়ে কার সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে?
এসব দিয়ে তো যুদ্ধ করা যায় না তবে!
দিন দিন কৌতুহল বেগেই উঠলো
একদিন সাহসকে আসকারা দিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম
এমন ভাবে দাঁড়িয়ে কেন তোমরা
কিসের আশায়?
কার জন্য অপেক্ষা করছো?
দিনের পর দিন?
তোমরা কি চাও?
উওর নাই।
ভাবতে না চাইলেও
ইচ্ছে হলো সবাই বোবা।
খানিক রাগের সুরেই সেখান থেকে পস্থান করলাম,
তারপর রোজ দেখতাম কিছু বলতাম না।

সেদিন শুক্রবার ছিল
কলেজ থেকে ফিরছিলাম,
চন্দ্রাগঞ্জের কুমোড়ের মেয়ে নুপুরকে দেখলাম
পরে আছে
পথের ধারে!
গোটা শরীরে রক্ত ঝড়ছে
পায়ের বগল দিয়ে রক্তের বিভীশিখা বেরিয়ে যাচ্ছে
পাসের ড্রেনটার পিপাসা নিবারনে।
একটা সবুজ হরিণিকে একটা বাঘ পেলে যে অবস্থাটা করে
তেমনই অবস্থা আজ নুপুরের
বেশ কিছু লোক ভীর করে দাড়িয়ে তামাশা দেখছে
কেউ একটা অ্যাম্বুলেন্সকে পর্যন্ত খবর দিচ্ছে না
ফোন টা বের করলাম
লাল আলো বুঝিয়ে দিল অ্যাম্বুলেন্ম আসছে
তারা নুপেরকে নিয়ে আবছা কুয়াশায় উধাও হয়ে গেল
আমি বাড়িমুখো হলাম
গোলবাগানটা পার হতেই আমি অবাক
যারা এতদিন মৃত স্তম্ভের মত দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার কোনে
তারা আজ রাস্তায় নেমেছে।
মোমবাতি আজ আগুন পরেছে
সাদা বেনারটা আলতা দিয়ে সেজেছে
হাতের কালো কাপড়টা চোখে স্থান পেয়েছে
বোবা মুখে আজ শব্দ ফুঁটেছে
সবাই এক সুরে বলছে
বিচার চাই বিচার চাই
নুপুরকান্ডের আসামীদের বিচার চাই
তার ফাঁসি চাই।
হাতের মোবাইল গুলো আজ লাইভ করায় ব্যাস্ত
পিপাসু ক্যামেরা গুলো যেন অনেক কাল পরে খাদ্য পেল।
আমি হতভম্ব
যারা আজপর্যন্ত মুর্তি সেজে ছিল
আজ তাদের চোখে আগুন
শব্দ তীখ্ন হতে লাগলো
রাস্তা কাঁপছে আজ তাদের পায়ের চাপে
কান একপ্রকার ঝাঝড়া বললেই হয়
ক্রমন ঘন কুয়াশার মধ্যে সমস্ত দেহ মিশিয়ে গেল
সঙ্গে শব্দ গুলোও।
সকালের পেপারটা হাতে ওঠাতেই
হেডলাইন
"কাল চন্দ্রাগড় থেকে নুপুরের ক্ষত বিক্ষত দেহ উদ্ধার"
বিস্তারিক সব লেখা
হালকা নীচে চোখ বোলাতেই আরেকটা হেডলাইন
সমস্ত মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেছে
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম
পেপারটি রেখে বাজারের পথে রওনা হলাম
কিন্তু একি আবার তারা এখানে
সেই একই ধঙ্গে একই রঙ্গে
মুচকি হাসলাম আর আপন মনেই বলেউঠলাম
"আবার মিছিল হবে"