আজ হঠাৎ এ কি হলো ?
কেন এই ছন্দপতন ?
দেবরাজ ইন্দ্রের সভায় নাচতে নাচতে হঠাৎ তাল কেটে গেলো !
আমি অপ্সরা ,
উর্বশী, রম্ভা, মেনকা কিম্বা অন্য কোনও নাম আমার...
নামে কিই বা আসে যায় ?
আমি অপ্সরা ,
দেবতাদের মনোরঞ্জনের জন্যই জন্ম আমার
অনন্তকাল ধরে ইন্দ্রসভায় নৃত্য করে চলেছি মৃদঙ্গের তালে তালে
আমি ক্লান্ত হইনা কখনও
আমাকে যে ক্লান্ত হতে নেই !!
আমি নারী, সুন্দরী, অপরূপা,
আমার সৌন্দর্য্য দেবতাদের তৃপ্তি দেয়, কামনা নিবৃত্ত করে,
কখনও এই সৌন্দর্য্য দেবরাজ ইন্দ্রের অবর্থ্য অস্ত্রও হয়ে ওঠে
তাঁর টলোমলো স্বর্গের আসনকে রক্ষা করার জন্য
ধরিত্রীর কোনও কঠিন তপস্যারত মানবের থেকে !!
স্বর্গের সুখ ছেড়ে আমাকে আসতে হয় ধরিত্রীতে
সেই মানবকে পথভ্রষ্ট করতে...
ভালোবাসার অভিনয় করতে হয় আমাকে
কিন্তু ভালবাসতে নেই !!
আমি যে অপ্সরা,
সাধারণ নারীর মতো ভালোবাসার অধিকার, ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আমার নেই !!
আমি নারী, কিন্তু এক অসম্পূর্ণা নারী...
নারীর শরীর আমার আছে কিন্তু নারীর মন আমার থাকতে নেই !!
পুরুষের দেহের কামনা মেটানোর সব উপকরণ আমার শরীরে ,
আমার চোখের মায়াবী দৃষ্টি, হাতের মুদ্রা, অপূর্ব গ্রীবাভঙ্গী, কোমরের দুলুনি, বক্ষের কম্পন, পদযুগলের নৃত্যের তাল – সব পুরুষরা দেখতে চায় –
কিন্তু দেখতে চায় না আমার মনকে !!
আমি অনন্তযৌবনা...
সে যৌবন শুধু পুরুষকে পরিতৃপ্ত করার জন্য
আমি বারাঙ্গনা...
শুধু একটিমাত্র পুরুষের বক্ষলগ্না হয়ে একটা সুখের নীড় বাঁধার স্বপ্ন আমায় দেখতে নেই !
নারীজন্মের সবচেয়ে বড় সার্থকতা “মা” হওয়া...
সে স্বপ্নও আমাকে দেখতে নেই !
আমি যে অপ্সরা !
বিধির এ বিধান আমি তো নিয়েছি মেনে !
তবে কেন আজ এই ছন্দপতন ?
তবে কি আর তালে তালে নাচতে চায় না আমার এই চরণ ?
আর কি চায়না হতে দেবতার হাতের পুতুল ?
এবার তবে শেষ হোক অপ্সরার এই মেকী জীবন...
অসম্পূর্ণা থেকে সম্পূর্ণা হয়ে উঠুক তার তনু-মন-প্রাণ......