২৫ শে বৈশাখ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।
বাঙালি ও বাঙলা সাহিত্য তথা বিশ্বসাহিত্যের এই কালজয়ী পুরুষের বহু বিচিত্র প্রতিভা ও সৃজনধর্মের আলোচনা ফুরোবার নয়। তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয়তো শুরু করা যায় শেষ করতে কুলকিনারা মিলে না। জগদ্বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আইনষ্টাইনের বেশ সখ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। তিনি একবার বলেছিলেন "লোকেরা বলে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি আর আমি বলি তিনি বড়ো বিজ্ঞানী" আইনষ্টাইনের এই মুল্যায়নের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা সাধারণের কর্ম নয়। তথাপি বলা যায় রবীন্দ্রনাথ, বড়ো একজন সমাজ ও মনোবিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মে এর উজ্জ্বল স্বাক্ষর রয়েছে ভুরিভুরি। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়: তাঁর গল্পগুচ্ছের গল্পগুলোতে মানুষের হৃদয় ধর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবচ্ছেদ করেছেন তিনি। এছাড়া তাঁর কবিতা, গান,নাটক, উপন্যাস, চিঠি, বক্তৃতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, শিশুতোষ রচনা, এমনকি অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, নৃত্যনাট্য ও ব্যক্তিগত আলাপচারিতার বিভিন্ন উক্তিতে ও মানব জীবনের হাসি কান্না,প্রেম বিরহ, অনুরাগ বিরাগ,স্নেহ ভালবাসা,অভাব ঐশ্বর্য দীনতা হীনতা,দান কৃপণতা, সাধুতা কপটতা,গৃহস্থি সন্যাস বৈরাগ্য, শিক্ষা দীক্ষা,সংস্কার কুসংস্কার,আইন আচার বিচার অবিচার,গোঁড়ামী উদারতা,নীতি দুর্নীতি,শিশুর সারল্য,প্রগতি পশ্চাতমুখিনতা, রাজনীতি কূটনীতি,কৃষি শ্রম, ঈশ্বর চিন্তা,মৃত্যু চিন্তা, আরো অজস্র বিচিত্রগামী বিষয় আশয় তিনি অনায়াসে স্পর্শ করে এবং এসবের ভেতর বাহিরের সামঞ্জস্য অসামঞ্জস্য নিয়ে চিন্তা বিশ্লেষণ করে গেছেন, তার সুদীর্ঘ আয়ুস্কালে। তদুপরি এতেও এই মহাকবির অতৃপ্তি রয়ে গেছে যখন আমরা দেখি তিনি কবিতায় লিখেনঃ
মাঝে মাঝে আমিও গেছি
পাড়ার প্রাঙ্গনের ধারে
ভেতরে প্রবেশ করি
সে শক্তি ছিলনা একেবারে।
...যে আছে মাটির কাছাকাছি
সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি।
তিনি নিজে ছিলেন জমিদার পুত্র। আজন্ম ঐশ্বর্যে লালিত পালিত, তাই এটা তার ব্যক্তিগত অনুভব, যে কৃষক শ্রমিক মজদুর মেহনতি মানুষের জীবনের আটপৌরে কাজকর্মের অংশীদার হয়ে সেই জীবনধারার বাস্তবানূগ চিত্রায়ন তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি, সুতরাং তিনি মাটি ও মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ কোন কবির বাণী শুনবার জন্য উৎকর্ণ হয়ে থাকতেন।
কবির এই অকপট স্বীকারোক্তি তাঁর মানসিক উচ্চতার এক চুড়ান্ত নজির। অতঃপর কে অস্বীকার করবে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙলা ও বিশ্বসাহিত্যের এক নিত্য প্রাসঙ্গিক নাম। জন্মদিনে কবিগুরুকে আমাদের স্বশ্রদ্ধ প্রণাম।