কবি হাজেরা কোরেশী অপি
অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে এক জীবন্ত প্রতিবাদ লিপি।

আমি লিখি

- হাজেরা কোরেশী অপি
আমি লিখি, লিখতে আমার ভালোই লাগে।
মনের কথা গুলো, কোনো সুসজ্জিত বাগানের মত,
কলমের কালিতে তুলে এনে, শুভ্র খাতায় রূপন করার চেষ্টা করি। হয়তোবা হয়, হয়তোবা হয়না।
হয়তোবা কোনো দুরন্ত কিশোরীর কাকডাকা ভোরের
বিছানার মত, অগোছালোই থেকে যায়।
তবুও আমি লিখি, লিখতে আমার ভালোই লাগে।
চারপাশে যখন অন্যায়, অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা দেখি,
তখন বাঘের মত গর্জে উঠে, কলমে তুফান তুলে দেয়ার চেষ্টা করি। হয়তোবা হয়, হয়তোবা হয়না।
হয়তোবা বাঘের বদলে, বেড়ালের মিউ ডাকটাই বের হয়ে আসে। তারপরেও আমি লিখি। লিখতে আমার ভালোই লাগে।
তবে, এই লিখার জন্য, আমি আমার স্বত্তাকে কখনো বিক্রি করে দেবনা। আমার আত্মাকে কক্ষনো মরে যেতে দেবনা। সস্তা বাহ্ বাহ্ পাওয়ার লোভে, আমার পবিত্র কলমকে, কখনো বলবোনা কোনো নোংরা, অশ্লীল, অচ্ছুত কথা উগরে দিতে। না না কক্ষনো না।
এই নোংরামির জন্যই আজ, সিনেমা হল গুলো, অভিজাত দর্শক হারা। সস্তা বিড়ি আর নোংরা ইশারাতে পরিবেশটা ভারী হয়ে আছে।
আমার লেখা গুলো যেমন আমার সৃষ্টি, তেমনি আমিও একজনের সৃষ্টি। কোনো কুমন্ত্রেই আমি আমার স্রষ্টাকে ভুলে যেতে পারবোনা। না না কক্ষনো না। তাঁর কথার অবাধ্য হয়ে, এমন কিছু রচনা করবোনা, যা আমাকে টেনে নিয়ে যাবে, ঐ লেলিহান অগ্নিতে। কিছুতেই আমি আমাকে ঐ আগুনের খোরাক হতে দেবনা। না না না কক্ষনো না।
আলোচনাঃ

কবিতার নামঃ "আমি লিখি"
কবি হাজেরা কোরেশী।

(১)
কবিতার প্রথম চরন "আমি লিখি লিখতে আমার ভালোই লাগে"
কথা পরিস্কার, কবির লিখতে ভালো লাগে তাই মনের কথাগুলো কবিতার আদলে সাজিয়ে গুছিয়ে কোন সুসজ্জিত সুবিন্যস্ত বাগানের মতো কলম কালির আঁচড়ে কাগজে তুলে আনেন। শতভাগ ভালোলাগা আর ভালোবাসা ছাড়া কোন কাজই সুচারু সম্পন্ন হয়না এটিই হক্ক কথা।
সুতরাং যারা কবিতা গল্প উপন্যাস নাটক লিখতে আসেন প্রথমেই নামজাদা কেউ হবার লোভে লেখা শুরু করেন না। আসলে মনের কোণে যে লিখতে ভালোলাগার এক প্রেরণা লুকিয়ে আছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে কলম ধরেন‌ কম্পমান হাতে,এটা অন্তত আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আলোচ্য কবিতায় কবি তাঁর লেখালেখি ভালো লাগার কথা উল্লেখ করে এরপর হরেক রকম কারণ ও ফিরিস্তি দিয়েছেন নিজস্ব লেখাজোখার ‌পক্ষে, তাই বর্ণিত কবিতাটিকে আমি আলোচ্য কবির আত্ম জবানবন্দী হিসেবেই সনাক্ত ‌করেছি।
কবি এখানে বলেছেন " হয়তোবা হয় হয়তোবা হয় না"
নিজের লেখা বাণী গুচ্ছকে তিনি সরাসরি কবিতার শ্রেণীভুক্ত করতে দ্বিধাগ্রস্ত? কিন্তু আমরা একটু অগ্রসর হয়েই যে উপমা দেখতে পাই কবিতার গতরে " হয়তোবা কোন দুরন্ত কিশোরীর কাকডাকা ভোরের বিছানার মতো অগোছালোই থেকে যায়? এই একটি মাত্র চরনে যে রূপকাশ্রয়ী বক্তব্য আমাদের ‌নজরবন্দী‌ হয়, একে সাক্ষী রেখে বর্ণিত কবিতার আর সব কথামালা যদি আমরা খারিজ ও করে দেই, তথাপি কোন চক্ষুস্মান হৃদয়বান পাঠক একে কবিতা বলতে নারাজ হবেন না, সুতরাং এটি কবিতা এবং শেষ পর্যন্ত আপাদমস্তক একজন কবির লেখা ‌কবিতাই।
(২)
লিখতে কবির ভালোই লাগে, সহজ কথায় ভালোলাগাও একধরনের লোভ, কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে কবি ক্ষোভ ও সামলাতে পারেন নি, তিনি লিখেনঃ " চারপাশে যখন অন্যায় অত্যাচার ধর্ষণ খুন দেখি তখন বাঘের মত গর্জে ওঠে কলম" এটিই খাঁটি কবির লক্ষণ, কবি মাত্রেই অন্যায় অনাচারের প্রতিবাদী।
স্বাধীনতার পর দেশে মন্বন্তর দেখা দিয়েছিল একবার তখন কবি রফিক আজাদের প্রতিবাদী কলম দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের হয়ে প্রতিবাদের এক মোক্ষম তীর ছুঁড়ে দিয়েছিলো " ভাত দে হারামজাদা নইলে মানচিত্র ছিঁড়ে খাবো" খাঁটি কবিদের এমন দুঃসাহস থাকে, কবি হাজেরা কোরেশী ও এর ব্যতিক্রম নয় নিঃসন্দেহে।
এরপর কবির শপথনামা ও বেশ লক্ষণীয়ঃ " লেখার জন্য তিনি তাঁর আত্মা ও সত্তাকে বিক্রয়ে নারাজ, সস্তা জনপ্রিয়তার লোভ কবিকে প্ররোচিত করতে পারবেনা সে অঙ্গীকার ও কবিতায় বেশ পাকা পোক্ত।
অন্যদিকে অশ্লীলতা নোংরামির বিপক্ষে অবস্থানরত কবি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখান সিনেমা হলগুলো কেন আজ অভিজাত দর্শক হারা, সস্তা বিড়ির দুর্গন্ধ আর নোংরা ইশারায় ভারী পরিবেশের প্রতি ও কবির কটাক্ষ বেশ তির্যক।
অতঃপর নিজের সৃষ্টিশীলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নিজ স্রষ্টার নিকট নিঃশর্ত  আত্মসমর্পণ করে মন্দ কাজের পরিণতি স্রষ্টার প্রতিশ্রুত অগ্নিকুণ্ড থেকে বাঁচতে কবির বিনম্র আকুতি আর দৃঢ় অঙ্গীকার, আমাদের নিকট তাঁর কবি পরিচিতি ছাপিয়ে, ব্যক্তিক ধার্মিক ও মুল্যবোধের সদাচারী প্রতিকৃতি ও আর গুপ্ত রইলো না ব্যক্ত হয়ে গেলো।
আমরা এই কবির কাব্যিক ব্যাক্তিক ধার্মিক পার্থিব অপার্থিব সার্বিক সাফল্য কামনা করি।

কবি পরিচিতিঃ

কবিঃ হাজেরা কোরেশী অপি।
জন্মঃ ৭ই ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশের সিলেট শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।
পিতা - মরহুম আব্দুল মুগনী কোরেশী, মাতা- রেজিয়া চৌধুরী, চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়।
স্বামী - মোহাম্মদ জিতু মিয়া
তিন কন্যা এক পুত্রের জননী  ১। মারিয়াম ২। সুমাইয়া ৩। তাকওয়া এবং একমাত্র পুত্র যেইন দিদাত ইব্রাহীম।

শিক্ষা- সিলেট সরকারী মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস, অতঃপর সিলেট ল কলেজে প্রথম বর্ষে থাকা কালিন বৈবাহিক বন্ধনে‌ আবদ্ধ হয়ে‌ অধ্যয়নের‌ ইতি,
পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি প্রাপ্ত, ৯০ এর দশকে দৈনিক সিলেটের ডাকে নিয়মিত কবিতা প্রকাশ হতো, সিলেট বেতার কেন্দ্রের এক কালিন নিয়মিত নাট্য শিল্পী। কলেজে থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়।
সিলেট ল কলেজে সাধারন সম্পাদক হিসেবে ইলেকশনে প্রার্থী হিসেবে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত।
স্কুল কলেজে খেলা ধুলা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকায় বহু পদক সনদ ও সম্মাননায় ভূষিত,সিলেট শহরে গ্রীন ফেয়ার কিন্ডারগার্টেনের এককালীন শিক্ষক।
ইংল্যান্ডে চাইল্ড কেয়ারের উপর NVQ লেভেল টু এবং ত্রি করে একটি প্রি স্কুলে সাপোর্ট ওয়ার্কার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা ও বর্তমানে ‌যুক্তরাজ্যে স্বপরিবারে স্থায়ী বসবাস, দীর্ঘ দুই‌ যুগের বিরাম ‌বিরতির পর আপাত অবসরে একাগ্র স্বাধনা‌ লেখালেখি ‌ও‌ কবিতা চর্চা।
ব্যাক্তি জীবনে অত্যান্ত ধর্মপরায়ন  বিনয়ী বিদুষী, প্রচারবিমুখ এক দয়ার্দ্র পরোপকারী।


আলোচকঃ
মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন
কবিও সমালোচক।
গ্রামঃ জামালপুর>ডাকঃ দাওরাই বাজার।
উপজেলাঃ জগন্নাথপুর> জেলাঃ সুনামগঞ্জ।
বাংলাদেশ।