কবি গবেষক দীনুল ইসলাম বাবুল।
জন্ম ২৩ মার্চ ১৯৫৩ ইং সুনামগঞ্জ জেলাধীন জগন্নাথপুর উপজেলার জহিরপুর গ্রামে। পিতাঃ মরহুম ওয়াজিবউল্যা মাষ্টার,মাতাঃ মেহেরুন্নেসা। ৪ ভাই ও ৩ বোন তিনি তৃতীয়। সহধর্মিণী মোছাঃ নাদেরা ইসলাম, তাঁদের তিন পুত্র এক কন্যা যথাক্রমে ১। তপন ইসলাম ২। শাওন ইসলাম ৩। নয়ন ইসলাম ৪। মণীষা ইসলাম।

শিক্ষাঃ
আশার কান্দি প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে (এম সি ইউনিভার্সিটি কলেজ) ইসলামিক হিস্ট্রি  বিষয়ে অধ্যয়ন।

ব্যক্তিত্বঃ
তার বহুবিধ পরিচয়। কবিঃগবেষক,নাট্যকার, রাজনিতীবিদ, সাংবাদিক,সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী,
স্থানীয় নয়াবন্দর উচ্চবিদ্যালয় এণ্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের ভুতপূর্ব সভাপতি, জনসেবাও প্রশাসনিক পর্যায়ে তিনি একজন প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান। গ্রাম্য বিচার ব্যবস্থার একজন সালিস ও বিচারক। এছাড়া  তার আরেকটি সদগুন তিনি একজন সুবক্তা সুরসিক।

রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি চর্চাঃ

সত্তরের দশকে সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য সংগঠন কলম তুলি সংঘ, বৈশাখী নাট্যগুষ্টি,ও সমস্বর এর সক্রিয় সদস্য। গণমানুষের কবি দিলওয়ার ও সংগীত কিংবদন্তি পণ্ডিত রামকানাই দাসের ঘনিষ্ঠ অনুজপ্রতিম সহচর। কবি দিলওয়ারের সঙ্গে সাপ্তাহিক উল্লাস পত্রিকার সম্পাদনার মাধ্যমে ও জার্মান প্রবাসে থাকাকালে হাতে লিখা মশাল পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে সক্রিয় সাংবাদিকতা। এমসি কলেজের ছাত্রাবস্থায় প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক ছাত্রলীগের সদস্য এবং ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিপন্ন হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য জার্মানিতে পাড়ি জমান আ,স,ম,রব। সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও জঙ্গি মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ আরো অনেকের সঙ্গে। জার্মানি থেকে দেশে ফিরলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আদর্শের কারণে জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার মরহুম হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও তৎভ্রাতা ফারুক রশীদ চৌধুরী'র বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি, এবং স্থানীয় ৮ নং আশারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন ২১/০৪/১৯৮৯ ইং হইতে ২৭/১১/১৯৯২ ইং মেয়াদে এবং তৎপরে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সাহিত্য চর্চাঃ
মুলত ছোটবেলা থেকেই তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন এবং পরবর্তীতে সিলেটে এমসি কলেজে পড়ার সময় কবি দিলওয়ার ও তৎকালীন প্রতিষ্টিত কবি লেখক নাট্যকার,গায়ক ও গীতিকারদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে তা আরো বেগবান ও পরিপুষ্টি লাভ করে। তিনি হয়ে ওঠেন সত্তর দশকের এক শক্তিমান তরুণ কবি ও লেখক। সিলেটের তৎকালীন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হতে থাকে তাঁর লেখা। তখন আর লেখা গ্রন্থিত করার কোন খেয়াল ছিলোনা।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশই যথেষ্ট ভাবতেন। অবশেষে ২০০৮ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ "চিরদিন স্বদেশের" প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি দিলওয়ার সেদিন অনুজ এই কবিকে নিজ হাতে উত্তরীয় পড়িয়ে দিয়ে অভিনন্দিত করেন গণমানুষের নন্দিত এই বর্ষীয়ান কবি, এবং তাঁর বক্তব্যে প্রকাশনা অনুষ্ঠানকে আখ্যায়িত করেন সত্তর দশকের এক শক্তিমান কবির নব জন্মদিন হিসাবে। তাঁর সতীর্থরা ও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন উক্ত অনুষ্ঠানে।
উল্যেখ্য কবি দিলওয়ার অত্যন্ত স্নেহ করতেন তাঁকে তিনিও চির অনুরাগী ছিলেন দিলুভাই'র। ১০ই অক্টোবর ২০১৩ ইং কবি দিলওয়ারের মৃত্যু হয় এর পর থেকেই তিনি তাঁর দিলু ভাই ওরফে কবি দিলওয়ারের স্মৃতি রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠেন আমাকে সাথে নিয়ে তিনি বহুদিন কবি দিলওয়ারের বাসভবন সিলেট ভার্থখলায় গিয়ে কবিপুত্র কামরান ইবনে দিলওয়ার কবির বন্ধু এডভোকেট অরুন ভুষণ দাস,ও কবি সুপ্রিয় ব্যানার্জী শান্তকে নিয়ে বৈঠক করে দিলওয়ার স্মৃতি পরিষদ গঠণ করেন। পরবর্তীতে এই স্মৃতি পরিষদ সিলেটের সাহিত্যিক মহলে কবির নাগরিক শোকসভার আয়োজন করার ব্যাপারে ব্যাপক ভুমিকা রাখে। নাগরিক শোভসভার প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এম,নুরুল ইসলাম নাহিদ। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে সিলেটের সাহিত্যিক মহলের সকলে সম্মিলিত অনোরুধ করেন কবির রচনা জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য। মন্ত্রী মহোদয় ও আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে কবির "রক্তে আমার অনাদি অস্থি" গ্রন্থভুক্ত নাম কবিতাটি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয় এর সব ক্ষেত্রেই কবি দীনুল ইসলামের সক্রিয় তৎপরতা আমি নিজে চাক্ষুষ করেছি।

উপরোক্ত কাব্যগ্রন্থ চিরদিন স্বদেশের পাঠ পরবর্তী সুদীর্ঘ আলোচনা আমি(এই নিবন্ধকার)লিখেছিলাম।প্রভাষক সৈয়দ আয়েশ মিয়া'র সম্পাদিত মাসিক মুক্তধারা পত্রিকায়। পরবর্তী প্রকাশিত গ্রন্থ এইতো স্বদেশ। দিলওয়ার স্বদেশ। রাধারমণ স্বদেশ।
এছাড়া তার অপ্রকাশিত বহুল পরিশ্রমের বিপুলায়তন গবেষণা গ্রন্থ "বাউল স্বদেশ" এর পাণ্ডুলিপিখানা আমার পড়বার সুযোগ হয়েছে আমার আজকের আলোচনার মুল কেন্দ্র সেখানেই। ইত্যবসরে এই গুণী কবিও গবেষকের ব্যক্তি জীবনটাও বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পাঠকের জন্য বাণীবদ্ধ করে রাখলাম।
--------------------------------------

আলোচনাঃ
তাঁর যেকোন সৃষ্টি কর্মের সঙ্গে স্বদেশ কথাটি যুক্ত।
যেমনঃ চিরদিন স্বদেশ,এইতো স্বদেশ(কাব্যগ্রন্থ) দিলওয়ার স্বদেশ, রাধারমন স্বদেশ, শ্রীচৈতন্যের স্বদেশ,বাউল স্বদেশ,লোক সাহিত্যে স্বদেশ,সংস্কৃতি স্বদেশ,সাধনায় স্বদেশ। যে কারো মনেই সহজে প্রশ্ন জাগতে পারে এই স্বদেশ কোনদেশ?এর উত্তর ও একেবারে সহজ। তিনি বাঙালি কবি,তাঁর স্বদেশ মানে বাংলাদেশ। তিনি সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আউলা বাউলা বাংলাদেশের শেঁকড় সন্ধানী। শেঁকড়ের টান থাকলেই কেউ শেকঁড় সন্ধানী হয়। টান মানে প্রেম। সহজ কথায় দেশপ্রেম।কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমানের একটি লেখায় পড়েছিলামঃ ধীশক্তি সমন্বিত স্বদেশ প্রেম এই দুনিয়ার শ্রেষ্ট এলেম।
আমরা দেখতে পাইঃ দেশপ্রেম নামক দুনিয়ার শ্রেষ্ট এলেমটি দীনুল ইসলাম বাবুল ইতিমধ্যে হাসিল করেছেন।
এখানে আমাদের আলোচ্যের শিরোনামঃ বাউল স্বদেশ।
ধানের দেশ গানের দেশ বাংলাদেশ। আর এই গানের, মাটিলগ্ন একটি ধারা বাউল ধারা। সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এই গান মানুষের মুখে মুখে। এক কথায় পুরো বাংলাদেশই বাউল। হাজার হাজার বছরের ক্রমধারায় এদেশে অজস্র গুণী বাউল গীতিকবি ভাবুক ও মরমী সাধকের আবির্ভাব তিরোভাব ঘটেছে। যেমনঃ কান্হপাদানাম,
বড়ু চণ্ডীদাস,বিদ্যাপতি,চণ্ডীদাস,কৃত্তিবাস,
জ্ঞানদাস,গোবিন্দ দাস,হাজী মুহন্মদ,কাজী দৌলত ,রামপ্রসাদ সেন,দ্বিজ কানাই,লালন শাহ,গগন হরকরা,সৈয়দ শানুর শাহ,হাছন রাজা,রাজা রামমোহন,রমেশ শীল,রাধারমন দত্ত ,দ্বিজেন্দ্রলাল রায়,রজনীকান্ত সেন,অতুলপ্রসাদ সেন,
দুরবীন শাহ,পাগলা কানাই,আরকুম শাহ, আবদুর রহীম শাহ,উকিল মুন্সি,শাহ আনাছ আলী বাউল শাহ আবদুল করিম,  
পণ্ডিত রামকানাই দাস, সফিকুননুর, বাউল আমির উদ্দিন,এরকম শত শত নাম করা যায়।
ধান যেমন দেহের খোঁরাক,গান তেমনি মনের খোঁরাক।
তাই সারা বাংলাদেশে যেমন ধানের চাষ হয়। তেমনি গানের ও চাষ হয়। যারা ধান চাষ করেন তারা চাষী গৃহস্থ গৃহবাসী। আর যারা গান চাষ করেন তারা উদাসী সাধক অনেকেই গৃহত্যাগী। একারনেই সম্ভবতঃ তাদেরকে বলা হয় আউলা বাউলা।
আবার এই গৃহ ত্যাগই তাদের কে আসল গৃহ বাসের মর্যাদা দেয়,এজন্য বাউল শাহ আবদুল করিম বলেছেনঃ মন মজাইলে ওরে বাউলা গান। তুমি আমায় যা দিয়েছো/কি দেব তার প্রতিদান/
এই বাউল আবদুল করিম আমাদের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার,ধল গ্রামের কৃতি সন্তান। বাউল ও দেশাত্ববোধক গানে তাঁর অবদানের জন্য।বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক (একুশে পদক)
লাভ করেছেন।
কবি দীনুল ইসলাম দেশমাতৃকার এই আউলা বাউলা সন্তান দের উপাখ্যানই জুড়েছেন তার বাউল স্বদেশে।
এছাড়া এদেশের লোকসাহিত্য ও লোক সংস্কৃতির অনেক অজানা অনুদঘাটিত তত্ত্ব ও তথ্য উদঘাটন করেছেন এতে। আগামীর যেকোন লোক সংস্কৃতি গবেষক এই গবেষণা কর্মের ধারস্থ হলে তাঁর পথচলা সহজ ও বেগবান হবে সন্দেহ নেই।
কবি দীনুল ইসলাম বাবুলের, ভাবুক কবি মন আর গবেষকের অনুসন্ধানী চোখ দেশমাতৃকার বিচিত্রমুখি শুলোক সন্ধানে প্রতিনিয়ত পরিব্রাজনে ব্যস্থ দীর্ঘজীবী হোন স্বদেশ চিন্তক দীনুল ইসলাম বাবুল।

আলোচকঃ
মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন।
কবি ও সমালোচক।
গ্রামঃ জামালপুর থানাঃ জগন্নাথপুর জেলাঃ সুনামগঞ্জ।
বাংলাদেশ।