নির্জন তপ্ত দুপুরে গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে বসেছিলাম।
শীতল ছায়ায় ঝিরঝিরে বাতাসে,
ক্লান্তি মোচন হলো,শান্তি এলো তনুমনে।
অদূরে অন্য একটি গাছের শাখায়
উড়ে এসে জুড়ে বসলো একটি পাখি,
আমি তার নাম জানিনা।
ইচ্ছে হলো পাখিটির নাম জানতে?
মুশকিল হলো মানুষী ভাষা পাখির অজানা,
আমিও পাখির বুলি বুঝিনা,
উভয়ের বাক বিনিময় অসম্ভব।
তথাপি হেঁয়ালি করেই জিজ্ঞেস করলাম
ও পাখি তোমার নাম কি?
দৈবাৎ পাখিটি জবাব দিল মানুষী ভাষায়!
আমি এক ক্ষুদ্র পাখির প্রজাতি,
আমাদের নিজস্ব কোন নাম নেই,
মানুষেরাই আমাদের বিভিন্ন নামে ডাকে।
আমি বেশ মজা পেলাম পাখির জবাবে,
আবারো জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি খাও?
পাখি এবার একটানা বলে যেতে লাগলো...
পোকা মাকড় ঘাসপাতা খুঁটে খুঁটে খাই,
লুটেপুটে খাওয়া বা লুটপাটের অভিরুচি নেই।
মদ্যপান ধুমপানে আসক্তি নেই,
মাতলামি আঁতলামি, চামচামি করিনা।
সুদ, ঘুষ,উৎকোচ, দান ভিক্ষা, গ্রহণের অভ্যেস নেই।
পক্ষী সুলভ খেলাধুলা করি,
কোনরকম বাজি জুয়া খেলি না।
পরশ্রীকাতর, পরনিন্দা পরচর্চার স্বভাব নেই,
অহেতুক ঝগরা বিবাদ ফ্যাসাদ মারামারিতে দারুন অরুচি।
মিথ্যাচার মিথ্যাভাষণ, চুরি চামারি, ঠকবাজি বাটপারি
প্রচণ্ড ঘৃণা করি।
লোভ দেখিয়ে পরের ক্ষতি আর নিজের লাভের,
অসাধু ব্যবসার বাসনা নেই।
নিজে গলাবাজি করিনা, অন্যের ও গলা টিপে ধরিনা।
আমরা দলবেঁধে চলি, কিন্তু
দলবাজি দখলবাজি, চাঁদা টেণ্ডারবাজি,
মনুষ্য সমাজে সচল থাকলেও, পক্ষী সমাজে অচল।
আমরা বৃক্ষ শাখে থাকি, বৃক্ষের গোড়া কর্তন,
আমাদের স্বভাবের বিপরীত।
বৃক্ষের গোড়ায় বসে তার গোড়া কর্তনের স্বভাব,
একমাত্র মানুষ জাতির মধ্যেই দেখেছি।
কাব্যগ্রন্থ: কল্পতরু