পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত তুখোড় মেধাবী ছেলে,
অভাবের তাড়নায় সে কলকাতায় গিয়ে রিক্সা ঠেলে!
একাকী নিরুপায়, রক্তে রঞ্জিত, প'ড়ে দূর্ঘটনার কবল!
এ ছেলের বৃদ্ধপিতা মৃত্যুবরণ করেন, কিছুদিন পর,
দশটি মুখের সংসার অর্পিত হয় তার কাঁধের 'পর।
অবশেষে কলকাতা থেকে ফিরে ধরে সংসারের হাল।
আরও আছে পৃথিবীর মাঝে এক অত্যাশ্চর্য প্রাণি,
প্রখর মেধাসম্পন্ন ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী তিনি।
তার খবর রাখে, মাঠের কাদা, রোদ-ঝড়-বাদল!
বাবা তার ছন্নছাড়া-হতচ্ছাড়া, খাম-খেয়ালিতে চলে,
ছেলের পড়া বন্ধ করে, লাগিয়ে দিলো মজুর দলে।
তার সে মেধার দ্যূতি, নেভালো পেটের অনল!
শৈশব, কৈশর, স্কুল হারিয়ে, জীবন যৌবন জ্বালিয়ে!
অবশেষে সে "কুলাঙ্গার" উপাধী পেলো, সংসার চালিয়ে!
তার কষ্ট রাখার জায়গা নেই, কাঁদে-আকাশ-পাতাল!
মনে মনে সে বলে হে খোদা, এর চেয়ে তুমি-
মেথরের কাজ দিলেও স্বস্থিতে থাকতাম আমি।
অবশেষে বাড়ি থেকে পালিয়েও বদলায়নি কপাল।
আত্মসম্মান অপমানবোধ সব কেড়ে নেয় পেটে,
শরীর-মন মানে না, তবুও মরতে হয় যে খেটে!
কখনও মনিবের কাছে খেতে হয় অকথ্য গালাগাল।
কখনও ওরা খোয়া ভাঙে, প্রখর রোদের মাঝে,
কখনও হেলপারী করে রাজমিস্ত্রির কাজে।
ভবন ধ্বসে এদেরই মাথায় পড়ে চিরকাল।
সংসারের জন্য তাদের প্রাণ যায় অকাতরে!
শোকের বন্যা নেমে আসে তখন সংসারে।
স্ত্রী, সন্তান সংসার নিয়ে হয়ে যায় বেসামাল!
কখনও ওরা জাল টানে, নদী-বাওড়-বিলে,
খুব ভোরে বেরুতে হয়, জাল বেঁধে সাইকেলে।
শীতের ভোরে ভারি কষ্ট, কন্ কনে ঠান্ডা জল!
কখনও চারা পোনা মাছ ট্রাকে করে নিয়ে,
সরবরাহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে।
অনিদ্রা-অনাহারে, রাস্তায় কাটে প্রতি পল।
তীব্র বৃষ্টিপাত মাথায় পলিথিন মুড়ি দিয়ে,
ট্রাকের উপর থাকতে হয়, প্রাণটা হাতে নিয়ে।
লোকে দেখে মনে করে, ট্রাকে বুঝি গরুর পাল।
একদিন ঘটল এক বড় দুঃখজনক ঘটনা,
পোনা মাছের ট্রাক উল্টে পড়ল পাশের খানা,
দাউদ নামের লোকটি ঘটনাস্থলেই করল ইন্তেকাল।
স্বামীহারা বিধবা স্ত্রীর লাগতে হয় নানা কাজে,
মাটিকাটা, জমি রোপন, রাজমিস্ত্রির সাহায্যে।
সংসারটা নদীর শেওলার মত ভাসে টলমল্ ।
(শেষ পর্ব)