(১)
হাতে হাত রেখে ললন ললনা চলেছে অমেয়
দূর থেকে দেখলে মনে হয় কার্তিকে সারমেয়।
দুই ফুটদ্বয় হাই হিল পরে পােনী ঘােড়ার ন্যায়
উলঙ্গ বাহার ড্রেস পরে রমণী চলেছে সায় সায়।
প্রেমের বাতাসে ফুর ফুর করে উড়িছে আলোল অলক
দেখলে পরেই নাগরদের চােখে, পড়বে না আর পলক!
প্রসাব লাগলে ছেলেনা দাঁড়িয়ে, কুকুরের মত করে
রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবার সমুখে, দেয় চনচন করে ছেড়ে।
মেয়েরাও হয়ত তাদের মত, করত এমন দাঁড়িয়ে
সেটা আর হচ্ছে না, কাপড় ভেজার ভয়ে।
বিশ্ব বাজারে নেমেছে আজ, প্রতিযোগিতার ঢল
যে যত কাপড় উঠাবে, সে হবে সফল।
শিক্ষিত ঘরের সন্তান মোরা, শিখিনা তবু সভ্যতা
প্রাচীনত্বের লাথি মেরে প্রতিষ্ঠা করি নব্যতা।
খােলা-মেলা চলছে সবই, এটা যুগের শ্রেষ্ঠাকর্ষণ
মেয়েরা আবার দিচ্ছে হমকি, ছেলেদের করবে ধর্ষণ।
এজন্য বুড়োরা আবার পড়েছে মহা চিন্তায়!
বুড়ো বয়সে এসে কি এবার ঈমান-আমান যায়?
উরু আটা প্যান্ট পরা যেন ফড়িং-এর ঠ্যাং
চশমাটা চােখে ঝুলিয়ে হেটে যায় ট্যাং ট্যাং।
কোন রকম যাদের পিত্তি রক্ষা হামার অর্থ দিয়ে
তারা আবার মোটর চড়ে ধূলো উড়িয়ে।
তাদের কিছু বলা যাবে না, থাকতে হবে চুপ-চাপ
যদি কিছু বল তবে চৌদ্দ গোষ্ঠী ছাফ!
পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা, অফিসে অবাধ ঘুষ
কালের চক্রে ব্রতী সবাই নেই কারো হুস।
সন্ত্রাসীদের করছি দমন, অস্ত্র দিয়ে হাতে
সোনার ছেলে সোনার দেশে খুব খাটছে দিনে রাতে।
নবীন সাজে সেজেছে অতান আজ মহা জাগরণে
উন্নয়নের বইছে জােয়ার ঘাটতি নেই কোন খানে।
হৃদয়ের চেয়ে দুঃখ বড়, রাখি তারে কােন পাত্রে
নিত্য এসব বেড়ে চলেছে, আগুন জ্বলে গাত্রে!
বাবার কথায় কোন দাম নেই, ছেলে মাতুব্বর
আমাদের মাঝে অপসংস্কৃতি নিত্য হচ্ছে বিস্তার।
ছেলে হল হােটেলের মালিক, বাপ করে ভিক্ষা
মা জননীর অভুক্ত রেখে, দিই জন্ম দেওয়ার শিক্ষা।
মোদের সামনে অর্থ এলে ন্যায়-নীতি যাই ভুলি
ডিমের দাম দিলে হায়েনার হাতে মাথাটা দিই তুলি।
অন্যের ভাল দেখলে পরে ঝলসে ওঠে চােখ
কেমনে তার করব ক্ষতি, নিশিদিন খুঁজি ফোঁক।
ঈদগাহে গিয়ে তাকবীর দিই রোজা থাকিনা কােন দিন
পূজা মন্ডবে না গেলে পূজা হয় না, আমরা মুসলেমিন।
নামাজীদের দিকে আড়চোখে তাকাই, এটা মোদের কর্ম
গােশ রুটি খেয়ে পালন করি, দ্বীন ইসলামের ধর্ম।
কারো মাথায় টুপি দেখলে পেছন থেকে দিই গালি
রাস্তা দিয়ে মেয়েরা হাটলে হাতে বাজাই তালি।
নামাজের জামায়াতে তিনজন, টিভির সামনে লক্ষ
ধর্মের কথায় মুখ বেঁকে যায়, আধুনিক মানসে সুদক্ষ।
কােরআন হাদিস ছেড়ে মোরা বেছে নিয়েছি ডিশ
অষ্ট প্রহর ছবি দেখি ব্লুু ফিল্ম আর ইংলিশ।
একত্রে বসে বাড়ির সবে দেখছি এমন ছবি
লজ্জা নেই, বধু নিজের বধূ একাকার সবই।
স্বামী দরজায় বসে বিড়ি টানে আর চৌকি দেয় জনতার
ওদিকে স্ত্রী পর পুরুষের সাথে বিকায়ছে সম্ভার।
তাদের পেটে জন্ম নেবে কত বড় বিশ্বাসী, বীরযাদ্ধা
ভাবুন বসে গালে হাত দিয়ে জ্ঞানী, বিবেক, বােদ্ধা!
আর কিছু বললাম না ভাই এখানে করলাম শেষ
নৈলে আবার মুন্ডু যাবে এইতো মোদের দেশ!
রচনা : ১৯৯৬ খ্রিঃ
(২)
চোর পড়েছে, চোর পড়েছে, চোর পড়েছে ভাই!
ভূমি চুরির আগাম খবর জানিয়ে দিতে চাই!
চোর পড়েছে সবুজ গাঁয়ে, চোর পড়েছে মাঠে!
চোর পড়েছে শহর-গঞ্জে বেন্ধে আটে-ঘাটে!
দেখ সবাই এই মাটিতে পড়েছে চোরের ছায়া!
তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে, অন্তরে নেই মায়া!
চোরের বিষাক্ত নখের ছাঁপ পড়েছে সবুজ ঘাসে!
বাংলার আকাশ হয় যে ভারী দুষিত নিঃশ্বাসে!
গায়ে তাদের নোংরা পোষাক, মাথায় এলোচুল,
মুখে নিয়ে ক্ষুধার ছাঁপ করবে হুলস্থুল!
আঁকড়ে আছে এই মাটিতে, লুটতে দেশের ধন,
ধরতে হলে ময়দানে সব এসো জনগণ।
সত্য-মিথ্যা বোঝে না ওরা, দেখে না অন্যায়,
ওদের বাপ-দাদার ইতিহাস তারই সাক্ষ্য দেয়!
দেশটা তো নয় কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি
দেশটা দেশের সব মানুষের, মিথ্যা নয় একরত্তি।
ভাবে ওরা দেশটাকে কীভাবে আস্ত গিলতে চায়!
দেশ-জনতার শত্রুদের এই মাটিতে নেই ঠাঁই!
স্বভাব ওদের চুরি করা ওরা চোরের জাতি,
ভূ থেকে আকাশকে ছুঁতে চায় যে রাতারাতি!
লুটবে ওরা দেশের টাকা, ভাংবে দালান-বাড়ি,
নিরীহ লোকের রক্ত খেয়ে ঘুমকে নিবে কাড়ি!
স্বাধীনতা দলবে পায়, মুখে রক্ষার মন্ত্র!
খাই খাই নীতির কবলে শ্বাসরুদ্ধ গণতন্ত্র!
ধর্ম-কর্ম করে অগাধ লোক দেখানোর জন্য
কলিযুগের আবু জেহেল, ওদের অন্তরটা জঘণ্য!
দিন-দুপুরে পথে ঘাটে মানুষ হবে বলি
মানব রক্তে ক'রে স্নান খেলবে ওরা হোলি!
মানব রক্ত পান করবে, কলিজা খাবে চাবিয়া!
পেটের মধ্যে জ্বলছে তাদের ক্ষুধার সাতটি হাবিয়া!
আইন কানুন সবই হবে তাদের হাতের খেলা
মানুষ তো নয় আসলে যেন ইবলিশেরই চেলা!
মানব সমাজে যদি কায়েম হয় চোরের রাজ
মানুষ হয়ে মোদের কাছে এটা কঠিন লাজ!
দমন ওদের করতেই হবে যদি ভালো চাও,
নইলে সবুজ থাকবে না আর তোমার সবুজ গাঁও!
বেরিয়ে এসো হে জনতা রুখতে হবে চোর,
টুটে যাবে ঘোর তমসা, আসবে নতুন ভোর!
রচনা : ০৫/১১/২০০৬ খ্রিঃ