🍁
তুমি মম শারদ-শশী আঁধারের মাঝে অরুণ-আভা
কনক-নির্মিত ওগো সুশোভনা নয়নে তব এত প্রভা
চন্দ্র-দর্পহারা চন্দ্রাননী তোমারি পাদমূলে দিই অর্চনা
শশধরবদনী ত্রিভুবনজয়ী অয়ি করি তোমারি সাধনা।
যৌবন-রভসে ঘনঘোরমদে সোমত্ত তুমি সদা নির্মল
পুলক-মুকুল-অবলম্ব সঞ্চিয়া মকরন্দ ছড়াও পরিমল
হেরি উজোল মুখ উপজিল মহাসুখ অয়ি সুধা-অধরা
অচিন্ত্যাব্যক্তরূপিণী প্রাণিনী মোর তুমি মোর বসুন্ধরা।
তরুণ অরুণ তব চরণ দুখানি বসুধা-পৃথুল লহু লহু হাসি
নীরদ নয়ন মোর ঘনঘোর শেল হিয়া তবুও ভালোবাসি
নির্ঝরিণী অবগুণ্ঠিত শতদলবাসিনী লাজে লুকোয় হায়
সুললিত ধ্বনিতে বিকশি ক্ষিতিতলে কে যায় কে হারায়?
নয়ান-পুতলী মোর বাহু পসারিয়া আছি আজও বিনিদ্র
মোহিনী নিদারুণ তুমি অমোঘবিরহে করো মোরে ছিদ্র
বিমল বিধু বঁধু তুমি চৈতন্যরূপিণী কলভাষী অমেয় মধু
দিবস-যামিনীতে সমর-শান্তিতে তুমি মোর বসন্তসন্তবধু।
🍁
কোন ছন্দে হাসো তুমি, ওগো কোন সুরে গাও
ক্লেদজ পৃথিবীতে এত বিমলতা কোথায় পাও?
সন্ধ্যার আরতি তুমি, তুমি সাড়াও সব মনঃপীড়া
ঋতুও জানে কতটা গভীরে তুমি দেখাও ক্রীড়া।
সৌন্দর্য তোমার নামে নেমে আসে এই পৃথিবীতে
তোমাকে লক্ষ করে কতজন বাঁচে রোজ সঙ্গীতে,
তোমার কথা ভেবে গারদে কাটে কত সহস্র জীবন
তোমাকে ভাবতে ভাবতে রোজ রাতে নামে স্বমেহন।
তোমার মুখের চেয়ে নির্মল পথ্য আর কোথাও নাই
ক্লান্তিবিধৌত এই পৃথিবীতে শুধু তোমাকেই চাই,
প্রাণের শান্তি তুমি মোর, ওগো শ্রেয়সী মন্দাকিনী
অনাদিকালের পারিজাত তুমি তোমায় আমি চিনি।
বিদ্ধ তুমি করবে যত আমায় ততই আমি হব ঋদ্ধ
অশুদ্ধ সব চিন্তা ফেলে, কসম, হব আমি বিশুদ্ধ,
তন্নিষ্ঠ প্রেমিক হবো আরও হবো যা তুমি সদা চাও
ঠোঁটে ঠোঁটে শপথ করবো যদি তুমি ঠোঁটটি বাড়াও।
🍁
অয়ি দেবী, সতত কলভাষিণী, সদা পরশতপ্ত রজনী যাপি
ধীমানিনী তুমি রজনীর দামিনী আমি এক মহাপাতক পাপী
নিঃশব্দপদে তুমি যবে আসো নীবিবন্ধ শিথিল ওগো কিঙ্কিণী
নভস্থলে লাগে ঘোর সুস্মিত ওষ্ঠাধর থরথর ওগো নন্দিনী।
অয়ি মনসিজে মম অনাত্ম্য দেহ আর্ত মিনতি চায় সম্ভোগ
নহে নহে এই ভোগ কামনার, অতনু আঁখিতে ক্রূর প্রমোদ
সাজায়েছো তুমি যৌবনপসরা ঢলঢল অঙ্গ রূপ-রস-সুধায়
অসহ্য যন্ত্রণা মোর ক্লিন্ন অন্তকালে কোথায় খুঁজি তোমায়?
শ্লথনীবি যৌবনা উজোর তুমি প্লাবিত এই অ্যাক্রোপলিসে
বিরহ বিরাজে বিজন মানসে অতুষ্ট বিনিদ রজনী গলিছে
উল্বণ উল্লাসে তব স্মরি এই মগ্নতরী ভাসিছে এই বদ্বীপে
অমৃত অত্যয় মাঝে তুমি আছো মোর নিবদ্ধ নয়নপ্রদীপে।
নেই সেই রথী-মহারথী অস্ত্রশস্ত্র আয়ুধ অর্বুদ সৈন্য-সামন্ত
নেই সেই সরিৎ নীরহি হিমকর অধুনা অসহ্য সকল গন্তব্য
চিরউদ্ভিন্না সুরব্রততী তোমারি বেদিমূলে রোজ অর্ঘ্য গাঁথি
পর্যুষিত ক্লেদে নির্বেদে তৃষ্ণায় অয়ি স্মরি স্মরি সহস্র রাতি।
🍁
রূপশশী তুমি মোরে দিও আশ্রয় তোমার হৃৎগগনে
পুড়ে যায় তেপান্তর কান্তাবিরহী এই সুদীর্ঘ লগনে।
যামিনীর অগ্নিতে ওগো সত্তমা কেনো রোজ পুড়াও
স্বমেহনের নেশা তুলে কেনো তুমি সদূরে চলে যাও?
এই সরোবরে প্রেম আছে এই ভিসুভিয়াসে আছে জল
ওই দুটি নয়নে গভীর গহনে প্রেম ঝরে সদা জ্বলজ্বল
রূপাগ্নি দিয়ে করেছো দহন হাসিতে করেছো প্রাণহরণ
মৌহালী গোলাপ দেবো, অয়ি সন্ত, এবার করো বরণ।
তোমার বসন্তে প্রেম কলকণ্ঠ আমি বাজায় তোমার সুর
হেরিয়া কান্তি ওগো শুচিস্মিতা কাটিবে কেমনে এ ঘোর
রবি-শশী লাজে লুকোয় নিশি অম্বরে বিলোল সুধাময়ী
দূরতম দুরাশাতেও তুমি ছিলে হৃদাকাশে হৃৎপদ্ম অয়ি।
তোমার জন্য জাগবো রাত লিখবো প্রেমের মহাকাব্য
ভাসাও প্রেমতরী এই সুরধুনীতে আছে অতলান্ত নাব্য
আশ্রয় দিও যমুনা মোর ভেঙো না মোরে করালগ্রাসে
তুমিহীনা এই ম্রিয়মাণ পৃথিবীতে বাঁচিবো কোন আশে?
🍁
ওগো সুন্দরীসন্ত প্রেম বসন্ত কেনো জাগাও নেশা
তোমাকে লক্ষ করে কবিতা লেখাই আমার পেশা
যে তুমি জাগাও সুরসপ্তক অলোক মেদুর হাসিতে
মহাপাতক সে যে না পারে তোমায় ভালোবাসিতে।
তোমার সন্নত সৌন্দর্যে পথে পথে বেড়ে যায় ভিড়
তোমার ওষ্ঠের নিচে বানাতে দাও মোরে প্রেমনীড়
তব বিলোল চোখের মায়ায় আমৃত্যু ভাসতে চাই
তোমার নামে মধ্যরাতে রোজ কবিতা চষতে চাই।
তাকাও যদি করুণার দেবী বাড়িয়ে দাও যদি ওষ্ঠ
শপথ করছি তোমার নামে হবো না কখনোই ভ্রষ্ট
থাকো যদি পাশে তুমি ডাকো যদি সদা কলভাষে
তোমার হাসির করাতের নিচে খুন হবো সব মাসে।
ভুবনমোহিনী সৌদামিনী তুমি মোর অমর সুরধ্বনি
স্বপন শয়নে দিবস-যামিনীর তুমি সৌন্দর্যের খনি
বিড়ালাক্ষী পদ্মিনী আমার দিও অভাগারে আশ্রয়
তোমার স্পর্শ পেলে আমার ঘুচে যাবে সব অপচয়।