ককপিটে রোদের নাগরদোলা দুলছে বিরামহীন,
প্রপেলারে মত্ত বিংশ শতক
যেন রকেন রোলে দোলে প্রিসলির স্বর।
উইন্ডোস্ক্রীনে মুখ রেখে চেয়ে থাকা বিদায়ের বিষন্ন মুখ—
এইবার উড়ে যাও, যাও পাখি পরবাসে যাও…
ওইখানে কেউ থাকে? মাখে তুষারের শিহরন বুকে ও মুখে?
ক্রিসেনথিমাম হাতে কেউ এসে দাঁড়াবে কি সুহাস,
উন্নত বাহুতে সম্ভাষন, নড়বে আঙুল তার সোনালীমা নোখ?
হয়তোবা ভ্রুর নীচে তার অনিদ্রা-হলুদ চোখে
আঁকাবাঁকা সাপের মতো শুয়ে থাকা নদী
পদ্মা, নীল, হোয়াংহো।
তোমার চোখেও কি নদী নয় ভীষন জমাট জল, বরফিত দীর্ঘশ্বাস?
বিশ্রামের রাতে নিসঙ্গ ক্লান্তিতে রানওয়ে যেমন
আঁধারের আলিঙ্গনে কাঁপে থরো থরো হিমেল ব্যথায়,
তেম্নি তোমারো চোখের খুব গভীরে এক বর্নহীন দাহ—
হৃদয়ের ক্ষতের মতো তুমি তাকে গোপনে লুকিয়ে রেখে
মুখে শুধু এঁকেছো এক সুদূরের অচেনা হাসি।
গন্ধহীন, স্পর্শহীন শাদা রাত পোড়ায় স্বদেশে,
বুকের ভেতরে জানি গর্জে ওঠে একলাখ ক্ষুধিত এঞ্জিন
একলাখ মত্ত প্রপেলার ঘোরে ওই মাথার ভেতরে।
তবু পৃথিবীতে রাত নামে নিবিড় তুষারের মতো,
তুমি শুধু উড়ে চলো ক্লান্তিহীন, তন্দ্রাহীন
অন্য এক সকালের দিকে।
২৩.০২.১৯৭৬ লালমাটিয়া ঢাকা।
কাব্যগ্রন্থ : উপদ্রুত উপকূল (ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯)