পুষ্পিত যৌবনার লাবন্যে ঝরা উচ্ছল জোছনায়-
প্রজাপতির ডানায় হেঁটেছি পথ হাতে রেখে হাত তোমার,
গন্ধ-মদিত শিউলির পথে চলেছি সেদিন প্রভাতের উত্তেজনায়
বিস্ময়ের জাগরনে আনন্দ শিহরনে মুগ্ধ ছিল কুমারী-সত্বাটি আমার!

অনন্তকালের বসন্ত বাতাসে সেদিন বাসন্তী উম্মাদনা-
অনাঘ্রাতা ফুলটির কান্তি করেছিল আবীর রঞ্জিত,
দূর্লভ যুবকত্বে তোমায় হারিয়েছিলাম ইচ্ছাকৃত পথিক আন্মনা
কিংসুক ম্পন্দিত চঞ্চল ঝর্ণায় ভেসেও ছিলাম কিছুকাল আমোদিত!

নগ্ন-গ্রীবায়, মুক্ত বেণীতে লোমশ হাতটি রেখে বলেছিলে নির্ঝর:
আমার মনের মানসী বলিয়া
তোমারে আমি ভালবাসি প্রিয়া
আমি ও গেয়েছিলাম: ‘‘এই লভিনু সঙ্গ তব/সুন্দর হে সুন্দর।”

তারপর নিসর্গ-মগ্ন মিথুন আতিশয্যে কেটেছে বহুদিন-
খাঁচাবন্দী পাখীর মত স্বপ্নবন্দী ও ছিল বর্ণাঢ্য সেই দিনগুলো,
নীলাকাশ ও মিশেছিল সাগরের নীলে বিলাসী-সৌখীন
শঙ্কিত এ চিত্ত পেয়েছিল তৃপ্তি ও মুক্তা ঝলকিত সহজাত আলো!

প্রাচীন প্রাসাদ ছায়ায় সবুজের বুকে কদমের ইশারায়
নাটোরের কাচাগোল্লা আর বনলতা সেন কবিতা-
ঢেকে রেখেছিল যুগ-যন্ত্রণার বৃশ্চিক-জ্বালা প্রসন্ন উর্বরতায়
দিয়েও ছিল উন্মুক্ত ফাগুনের অব্যক্ত উত্তেজনায় শতাব্দীর মুগ্ধতা!

আজ সূর্যালোকে বৈধব্যে কাঁদে শিশির সিক্ত ঘাস
তোমার সঙ্গেই হারিয়ে ফেলেছি সুখের সমস্ত স্বপ্ন-সাধ,
শুনে যাই-বিধ্বস্ত প্রাসাদের শেষ চিহ্নের তিক্ত দীর্ঘশ্বাস
সভ্যতার গর্বে ঢালে কলঙ্কী ছায়া সেদিনের উজ্জল চাঁদ উন্মাদ!

আজ বিষাদের কালো প্রাচীর ভেঙ্গে আর ওঠে না ফাল্গুনী গান
বসন্তে মুখরিত সে পল্লবিত বীথি-বিষাক্ত, রক্তাক্ত, রোগ পান্ডুর,
কৌমার্যের শোভন কান্তি আজ কৃত্রিম মুখোশে বিধ্বস্ত ট্রয়ের সমান
রাজপথের তেমাথায় দেখি কামোম্মত্ত ক্ষুধার্ত তিন কুকুরী ও কুকুর।