প্রতিটা মেয়ের মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে!
মেয়েরা প্রেমে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে,
একটা সাজানো গোছানো সংসারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তারা...
মাত্র দুদিনের আলাপেই, মাত্র দুদিনের ভালো লাগায়,
দুদিনের আবদারে, দুদিনের যত্নে, দুদিনের চুমু খাওয়াখাওয়ি তে
মেয়েরা তার প্রিয়জনের কাছে নিজেকে তুমুল ভাবে খুলে মেলে ধরতে জানে...
মেয়েরা নিজেকে নিঃস্ব করে দেয়,
সমস্ত গোপন থেকে গোপন খবর তারা তাদের প্রিয়জনকে হড়হড় করে বলতে থাকে। শরীরে কোথায় তিল আছে,
প্রাক্তন কোথায় কোথায় ছুঁয়েছে,
বুকের কোথায় পাথর লুকানো আছে,
মাথা কবে কবে বেশি ব্যথা করে,
বাড়িতে কার সাথে ঝামেলা বেশি হয়, কে কবে ঠকিয়ে গেছে,
কার উপর রেগে গিয়ে ওরা জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে,
কার উপর অভিমান হলে দুপুরের ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়,
সব সবটা উগরে দিতে থাকে...
মেয়েরা চায় ওদের পাশে বসে ওদের খুব বোকাবোকা কথা গুলো কেউ মন দিয়ে শুনুক,
চকলেট খেতে ইচ্ছে হলে চকলেট এনে দিক,
একটু জামাটা জুতোটা পছন্দ করে কিনে দিক,
একটু শাড়ির কুচিটা ধরে দিক...
মেয়েরা চায় বর্ষাকালের বিকেল বেলায় ওদের ভেজা ছাদের দিকে তাক করে
কেউ একজন একটা চিঠি ছুঁড়ে মারুক তিন তলা বাড়ির নীচে দাঁড়িয়ে...
মেয়েরা চায়, কেউ একজন ভীষণ আদর করার পর
দুহাতের তালুতে লজ্জায় মিশে যাওয়া মুখ তুলে একটা বার বলুক
"এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমার কাছে!
তোমার সবকিছুই তো আমার কাছে যত্নে রাখা থাকবে!
আর কারোর অধিকার নেই তোমাকে ছোঁয়ার"
মেয়েরা চায় মাঝরাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা করলে
হাতটা শক্ত ধরে কেউ সঙ্গে করে রাস্তা পার করিয়ে দিক,
কথা বলতে বলতে চুল মুখের উপর এসে পড়লে ঠিক করে দিক।
অতীব জঘন্য রান্নাটাও কেউ যেন চেটেপুটে খেয়ে একটাবার গাল টিপে বলুক
"তোমার আঙুলে জাদু আছে"!
কাছের মানুষটাকে ঠিকঠাক করে না চিনে জেনেই,
মেয়েরা প্রেমে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটা আলটুসি রোদের মতো স্বপ্ন পোষে বুকের ভেতর, একটা সাজানো গোছানো সংসারের স্বপ্ন পোষে...
যে সংসারে একটা কুকুর থাকবে,
যাকে সে নিজের হাতে করে খাওয়াবে,
যে সংসারে একটা নামাজ পড়ার জায়গা কিংবা একটা ছোট্ট ঠাকুর ঘর থাকবে।
যখনই কাছের মানুষটা অফিস থেকে ফিরতে লেট করবে যেন তারা মনে মনে আল্লাহ কিংবা ঠাকুরকে মনে মনে ডাকতে পারে...
যে সংসারে সকাল বেলায় উঠে মেয়েরা ঘেঁটে যাওয়া টিপ ঠিক করে চা বানাতে পারবে, যে সংসারে একটা ছাদ থাকবে,
ছাদের মধ্যে অজস্র গোলাপ ফুল ফুটে থাকবে।
সন্ধে বেলায় যে ছাদের মেঝেতে মাদুর পেতে বসে দুটো গল্প করা যাবে,
একটা হারমোনিয়াম নিয়ে গান শোনানো যাবে,
ছুটির দিনে দুজনে মিলে রান্নাঘরে ঢুকে ইলিশের বিভিন্ন রেসিপি বানানো যাবে...
যে সংসারে প্রতি রবিবার একসঙ্গে বাথরুমে ঢুকে জামাগুলো কাচা যাবে,
ঘরের ঝুল ঝাড়া যাবে, টেবিলটা, বইয়ের তাকটা গোছানো যাবে...
অথচ বোকা মেয়েগুলো একবারও ভাবে না এই মানুষটা ছেড়ে গেলে কি নিয়ে বাঁচবে
ওরা! একটা সংসার ভেঙে যাওয়া মন ভেঙে যাওয়ার চেয়েও বড্ড বেশি কষ্টের,
বড্ড বেশি যন্ত্রণার, বড্ড বেশি আক্ষেপের...
মেয়েরা আসলেই বোকা সহজ সরল মাটির ডেলার মতো নরম হয়,
তারমানে এই নয় যে মেয়েরা অফিসকাছারি, বাজারঘাট, কিংবা বিজনেস সামলাতে অক্ষম! মোটেই না...
মেয়েরা সব পারে, কিন্তু যখনই ওরা প্রেমে পড়ে, তখনই গলে জল হয়ে যায়,
প্রতিটা মেয়েই গুছিয়ে একটা সংসার করতে চায়, যে সংসারে দুটো মানুষ থাকবে,
আর তাদের ভেতর ভালোবাসাবাসি থাকবে, যত্ন থাকবে, আবদার থাকবে,
অভিমান থাকবে, দূরে গিয়েও কাছে আসার টান থাকবে..
মেয়েরা এরকমই হয়, মেয়েরা মন ভাঙার যন্ত্রণা সহ্য করে নেয়,
কিন্তু একটা সংসার ভাঙার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না, মরে যায় ওরা ভেতর ভেতর...