উপনগরী তে মুখোমুখি ছাদ
বড়জোর মাস ছয়,
দূর থেকে এসে বসত গড়েছে
হয়নি তো পরিচয়!
এদিকের ছাদ টিশার্ট শুকোয়
ওইদিক ব্রেসিয়ার,
বয়সে ফারাক বছর চারেক
মোটে নয় বেশি তার।
ওদিকের ছাদ তাকায় না সোজা
চুলে তে লেয়ার কাট,
এদিকের ছাদ পায়চারি করে
সে ও নয় আনস্মার্ট।
এদিকের ছাদে সিগারেট পোড়ে
বেপরোয়া ওড়ে ধোঁয়া,
কলেজপড়ুয়া ওদিকের ছাদে
আধুনিকতার ছোঁয়া!
ওদিকের ছাদ আলো নেভা ঘরে
ব্যস্ত মোবাইল ফোনে,
এদিকের ছাদ রাতের গভীরে
স্বপ্নেরই জাল বোনে।
এদিকের ছাদ আশা করে থাকে
ওদিকেরই উত্তর,
ওদিকের ছাদ মনে মনে ভাবে -
বোঝে না যে, ধুত্তোর!
দু'দিকের ছাদে অবসাদ জমে
দু'দিকেই বাড়ে রাগ,
দুই ছাদ দেখে একে অপরকে
গোপনীয় অনুরাগ।
এমনভাবেই কাটে শনি রবি
কেটে যায় রাত দিন
দু'ছাদের বুকে হামেশাই বাজে
রিনঝিন চিনচিন।
শীত ফুরোতেই বসন্ত হাওয়া
সেও হয়ে গেলে পার,
উপনগরী তে নামল গরম
ঠাঠা রোদে জেরবার!
ওদিকের ছাদ সানগ্লাস চোখে
সালোয়ার জিন্স শাড়ি,
কলেজের শেষে যায়না ক্যাফে তে
ফিরে আসে তাড়াতাড়ি।
অফিসফেরতা কলিগরা ডাকে
চলকে ওঠে বিয়ার,
হাতছানি ভুলে এদিকের ছাদ
বাইকে টপ গিয়ার।
দারুণ গরম এবেলা অবেলা
জামা ভিজে যায় ঘামে,
নিয়ম করেই দু'দিকের ছাদ
দুইবেলা ওঠে নামে।
ওদিকের ছাদ গলা ছেড়ে গায়
রবি ঠাকুরের গান,
সে সুর ছাপিয়ে এদিকের ছাদ
গীটারে বব ডিলান।
উপনগরীর মুখোমুখি ছাদে
সুরে সুরে রেষারেষি,
দু'দিকের মনে জমা হয় মেঘ
কারো কম কারো বেশি।
উপনগরীর আকাশের মুখ
সকাল থেকেই ভারী,
হয়তো বিষাদ মনের কোণে তে
দু'দিকের ছাদে আড়ি।
বেলা বেড়ে চলে গড়ায় দুপুর
দুই ছাদ ঘরে একা,
দুই ছাদ ভাবে একে অপরকে
দেমাকি, নয়তো ন্যাকা!
বিকেলে হঠাৎ উপনগরী তে
নামলো অঝোর বৃষ্টি,
দু'দিকের ছাদ ভাবলো যে আজ
হলে হোক অনাসৃষ্টি!
ভিজল দেদার, পরিচিত হল
মুখোমুখি দুই ছাদ,
হল কত কথা, উপনগরীর
কেটে গেল অবসাদ।