যেখানে রাস্তাটা উঠে গিয়ে বাঁদিকে ঘুরে যায়,
ওই পথটা অনেক দূরে যায়,
ওখানে অবাধে তুমি ফুটে থাকো,
তোমার পিঠের ব্যাগে থাকে তাতার রাজপুত্রের স্বপ্ন।
অনেক সাহস বুকে নিয়ে এসেছ,
অনেক অবাঞ্ছিত হাত চিবুকে,
খোঁড়া শামুকের বাদামি বিপ্লব
তোমার মুঠোফোন তবু বেজে ওঠে এই বিলাপে।
সেলোফেনের চোখে বালির খচখচ,
তরমুজ প্রিন্ট রুমাল দিয়ে মুছে ফেলো।
ওর থেকে আরও একটু এগিয়ে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলে আসতাম,
এখন আর ওই দিকে যাওয়া হয় না মোটেও,
মোটের উপর রেল ব্রিজ
পথ,জীবন,অববাহিকা কাঁপিয়ে
সোলগোহালিয়া-কালারিয়ার দিকে চলে যায়।
আমার ভেতরকার এক আমি ওই পথে নাড়া বেঁধে ছিলাম এক বছর।
তারপরের বছর,
নাকি তারও পরের বছর
তোমাদের এলাকায় কীর্তন গেয়ে ফিরেছি,
নাকি ফিরিনি?
ধুলো অধ্যুষিত ধর্মপ্রাণ জলাভূমি।
মাটির ঘরের দেওয়ালের গায়ে আলপনা,
পুরাবস্তুর মন-দেহ সাত সতীনের পিছে পিছে
কেটে গেছে তোমার সেই সব জীবন।
সে জন্মে ছিলাম আমি তোমার খোকা,
তোমার আঁচলের খুঁটে আঙুল জড়িয়ে
ধানের গোলার আশেপাশে লুকোচুরি ছুটোছুটি খেলা।
পান্তার জলে হাত ডুবিয়ে তুমি কাঁদতে,
আমি তো মোছাতে পারিনি সেদিনও তোমার চোখের জল!
সর্ষের খেত ঠেলে সেবার ভরা শীতে পাঠশালা থেকে ফিরে এসে দেখি মাঝ উঠোনে অনেক অনেক লোক।
কারো চোখে জল কারো বিহবল কারো শরীর অসাড়।
সে দিন কিছু খুঁটিনাটি নিয়ে খুন হতে হয়েছিল তোমায় স্বামীর হাতে!
আমি তো তাকিয়ে ছিলাম ফ্যালফ্যালে চখে,
ছলছল চোখে দেখেছি তোমার শব দেহ, মাথার চুল খোলা এলিয়ে পড়েছে নিকোনো উঠোনে,
পুঁই মাচার আশেপাশে চাপ চাপ রক্ত,
তোমার রক্ত দু'হাতে রাঙিয়েছি,তারপর থেকে যাই ছুঁয়ে  দেখি হয়ে যায় লাল,
বালিশ,বিছানা,মশারি,খাতা, পেনসিল,মাস্টারমশাই,গোয়াল ঘর,খেলার মাঠ,গোল পোস্ট!
পাশের বাড়ির রানুদির কাঁচা কলা পাতা বেনারসিটা আমার হাতের ছোঁয়াতেই হয়েছিল লাল!
এ কথা রটে গেল আগুনের মতো,
তারপর থেকে যার যখনই কিছু লাল রং দরকার
আমার কাছে এসে পেতে দিত সেই বস্তু,পঞ্জিকা,লক্ষ্মীর ঝাঁপি।
এই হাত দিয়েই প্রথম যৌবনে যে মালো মেয়ের বুকে হাত দিয়ে ছিলাম,শেষ বিকেলে তার চোখেও দেখেছি সেই লাল।
আকাশের গায়ে হাত বুলিয়ে দেখেছি লাল তুর্কিনাচন।
পান সুপারির সংস্পর্শ ছাড়াই আমার জিভ লাল।
কালীয়াদমন করে দেখি অমৃতের রং লাল,
বস্ত্রহরণ করে যে কদম গাছের ডালে রেখেছিলাম সেই গাছ হয়ে গেছে লাল।
তারপর এল দারুণ দারিদ্র্য, সরল ও ঋজু যা কিছু ছিল আমাদের সব বন্ধক রাখতে হলো,
রক্ষীণী সভা থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিয়ে এলাম,
এই পট্টনের অত্যাচারী ভূস্বামীর রক্ত চক্ষু‌ গ্রাহ্য করিনি।
বিধর্মী হয়েছি নিরন্ন থেকেছি,অন্তঃসলিল হয়েছি তোমার জন্য।
আজ তোমার জন্য সিংহদ্বার উন্মুক্ত তরঙ্গোচ্ছ্বাস!
তুমি চরিত্র মাধুর্যে অন্তরমুখী আলোড়ন
জন্ম জন্মান্তরের প্রবর্তনে।।

।।রহিত ঘোষাল।।
২৩/১১/২২