এখানে ভোর হয় পাখির কলতানে আর
বহুদূর থেকে ভেসে আসা আজানের শব্দে;
সকাল হয় মানুষের ব্যস্ততায়।

তারপর, কলতান কমতে থাকে আর ব্যস্ততা বাড়তে থাকে, ব্যস্তানুপাতে।
অফিসটাইমে কর্মমুখরতা।
রাস্তাঘাটে যানজট, জটপাকায় টেলিফোনের তারে
হর্নের কানফাটানো চিত্কারে।
সবাই ছুটছে, পাছে লেট হয়!
জীবনও ছুটছে রেললাইন ধরে সমান ও সমান্তরালে।
অটোস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ডে লোকের ভিড়,
কালো কালো মাথা।
কালো কালো ধোঁয়া।


তারপর একটা সময় সেই ধোঁয়াগুলো কোথায় জানি না মিলিয়ে যায়,
ব্যস্ততার মতো, লোকগুলোর মতো।

দুপুরে খাঁ খাঁ রোদ।
কাকেদের কর্কশ স্বর, কুকুরগুলো শুকনো ফুটপাথে জিভ বের করে হাফায়;
রিকশাওয়ালা ঝিমোয়
আর ফেরিওয়ালারা পাশের রাস্তা দিয়ে হাঁক মেরে যায়,
তবুও সকলে দিবানিদ্রায় অচেতন;
শুধু ঘড়ির কাঁটাগুলো জেগে থাকে।

পাক্কা দুঘন্টার বিশ্রাম নিয়ে
চারটে থেকে আবার ভিড়;
সরকারী কর্মচারী আর স্কুল পড়ুয়াদের।
একে একে আলো জ্বলতে থাকে, সূর্য ডুবে যায়।
হাইওয়ে ফ্লাইওভার আর ওভারব্রিজে জনঅরণ্য।
সকালের সেই চেনা কালো কালো মাথার ভিড়
অভিমুখ পরিবর্তন করেছে মাত্র।

আবার ব্যস্ততা,
বাড়ি-ফেরার মিছিল বাড়ি ফিরতে চায়।

আলোকসজ্জায় আমার শহর।
প্রাত্যহিক শোভাযাত্রা আছড়ে পড়ে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে-
প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবন।

সন্ধ্যে থেকে শুরু করে রাত,
ঘন অন্ধকারে বার্ধক্য আনে নিস্তব্ধতা;
শুনশান রাস্তাঘাট ভুলে যায় কয়েকঘন্টা আগের ইতিহাস।
ফুটে ওঠে অব্যক্ত মৌনতা
দিনের সব থেকে সেরা রুপ।
কর্মব্যস্ত জীবন একে একে লুকিয়ে পড়ে অলিতে গলিতে
আনাচে কানাচে, অন্ধকারে।

আমার শহর শুধু একাকী বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় আমার সামনে।
এটাই আমার শহর,

আমার প্রিয়
              তিলোত্তমা কলকাতা।


রচনাকালঃ ২৩/০২/০৯