ডাক্তারের অন্দরমহলে ঢুকিয়া দেখিলেন, ডাক্তার তথাকথিত সনদ ধারী নন। কেননা, তিনি সনদের ধার ধারেন না, মুক্ত মনের অধিকারী। তাহার বক্তব্য হাতযশ থাকিলেই চলিবে। রোগী সুস্থ হইয়া উঠিলেই তো হইলো। তাহা হইলেও কি আপনি তাহার চিকিৎসা লইয়া ফিরিবেন? ব্যাতিক্রমি কিছু করিতেছে ভাবিয়া উল্টো বাহবা দিবেন!
যদি না দেন তো কবিতাও লিখবার পূর্বে তাহা লিখিবার জ্ঞান লব্ধ করিয়া নিন। সনদ(জ্ঞান) অর্জন তো করিতে হইবে প্রথমে। পরে মানিবেন কি মানিবেন না, তাহা আপনার ইচ্ছে।
সকল কবি, বিজ্ঞ জনেরাই ছন্দ শিখিতে বলিয়াছে, দাসত্ব করিতে নহে। সুতরাং ছন্দ শিখিলেই যে তাহা মানিয়া চলিতে হইবে তাহা বাধ্যতামৃলক নহে। তাহা ছাড়াও ছন্দ জানিবার কিছু কারণ তো রহিয়াছেই।
১. আধুনিক কবিদের কবিতা সমূহ জানাঃ আধুনিক কালের কবিগণ কেমন করিয়া কবিতা রচনা করিয়াছেন, কোন কোন ছন্দে রচনা করিয়াছেন, তাহা জানিতে বুঝিতে হইলেও তো আপনাকে ছন্দর পাঠ শিখিয়া লইতে হইবে।
২. ছন্দের আনন্দ অনুভব করাঃ ছন্দ জানিলে আপনি ছন্দে রচিত কবিতা সমূহের প্রকৃত রস আস্বাদন করিতে পারিবেন। একটা উদাহরণ দিয়া দেই।
সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে
(অমিত্রাক্ষর)
এ কবিতায় কেহ যদি,
সতত হে নদ/ তুমি পড় মোর মনে
সতত/ তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে
এভাবে পড়িয়া থাকেন তবে অর্থের অমিল না হইলেও যথার্থ রস আস্বাদন করিতে পারিবেন না। কিন্তু যদি একই চরণ দুটি নিন্মোক্ত ভাবে পড়িয়া থাকে,
"সতত হে নদ তুমি/ পড় মোর মনে (৮+৬)
সতত তোমারি কথা/ ভাবি এ বিরলে" (৮+৬)
দেখিবেন এরূপ পাঠে অন্যরকম আনন্দ অনুভব হইতেছে।
৩. নিয়ম ভাঙিতেঃ নিয়ম না জানিলে নিয়ম ভাঙিবেন কি করিয়া! আইন না জানিলে আইনের ফাঁক ফোকর বাহির করিবেন কি করিয়া! স্বরবৃত্ত ছন্দ মানেই যে চার মাত্রার হইবে, তাহা তো ছন্দ না শিখিলে জানিবেন না। আবার অক্ষরবৃত্ত মানেই (৮+৬) মাত্রা, ইহাও তো ভুল!
সুতরাং, পরিশেষে বলিবো, সা/রে/গা/মা/পা/ধা/নি/শা না শিখিয়া কোন গায়ক স্টার হইয়া যাইতে পারে। কিন্তু তাহাতে ঝরিয়া পরার আশংকাই বেশি থাকিয়া যায়।
অনুরোধ করিবো, ছন্দ শিখুন। ছন্দে লিখিবেন কি লিখিবেন না, সে শিখিবার পরেই ঠিক করিয়া লইবেন।
(ইদানিং কালে ফেইসবুকের পাতায় দেখছি, ছন্দের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোষ্ট। তাতে একালের কবিরা ছন্দ লিখতে চান না, প্রচারনা চালানো হচ্ছে। তাই আমার ফেইসবুক পাতায় মতামত টি আলোচনার পাতায় তুলে ধরলাম।)
https://www.facebook.com/share/p/19cWBtWv5e/